তীব্র শীতে বোরো ধানের বীজতলার ক্ষতিঃ পলিথিনে ঢেকেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না
তীব্র শীতে আলমডাঙ্গা উপজেলাসহ চুয়াডাঙ্গা জেলায় বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা প্রচন্ড শীতের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বীজতলা রক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রকার ছত্রাকনাশক ছিটিয়েও সন্তোষজনক ফল পাচ্ছেন না।বেশ কয়েক দিন ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ দেশের পশ্চিমাঞ্চলে মাঝারী শৈত্যপ্রবাহ চলছে। গত ২৭, ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় (৭.৯ , ৭.৭ ও ৭.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস)। আগামি আরও কয়েক দিন তাপমাত্রার পারদ আরও নিম্নগামি থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ রকম পরিস্থিতি বিরাজমান থাকলে এবার এ জেলার বোরোর চারার সংকট দেখা দিতে পারে বলে কৃষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পৌষ মাস শুরুর আগেই অর্থাৎ অগ্রাহয়ণ মাসের মাঝামাঝিতেই তারা বীজতলায় ধানের বীজ বুনেছেন, সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে কেউ কেউ কিছুটা দেরিতে অর্থাৎ পৌষের শুরুতে বীজতলা তৈরি করেছেন। বিলম্বের বীজতলাগুলির ক্ষতি অপেক্ষাকৃত অধিক। ধানের দাম ভালো থাকায় ধান চাষের প্রতি এ এলাকার কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে।
অনুপনগর গ্রামের কৃষক হাসানুর রহমান বলেন, “ব্রি-৬৩,৫০ ও ৮১ জাতের তিন মণ ধানের বীজতলার অর্ধেকই অতিরিক্ত শীতে নষ্ট হয়েছে। নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে হবে। প্রতিদিন শীতের তীব্রতা বাড়ছে। তাই দুশ্চিন্তায় আছি।”
বাদেমাজু গ্রামের জিল্লু হোসেন জানান, “স্বর্ণ ও ধানী গোল্ড জাতের ১৫ কাঠা বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। অতিরিক্ত শীতে পাতো (চারা) লালচে হয়ে গেছে। পাতোর (চারা) পাতার মাথা শুকিয়ে যাচ্ছে। বীজতলা নষ্ট হয়ে গেলে ধান লাগাবো (রোপণ) করবো কী করে?”
দীঘলডাঙ্গা, চরপাড়া, মধুপুর ও বার ঘরিয়া গ্রামের চাপোড় গ্রামের কৃষক শের আলী, শুকুর আলী, নেকবার মন্ডল, সরকার আলী, তুফান মন্ডল, হারেজ আলী, আব্দুল জব্বার জানান, তারা ক্ষতিগ্রস্থ বীজতলায় স্কোর, ডুডু, সিনজেনটার থিওভিটসহ বিভিন্ন ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছেন। কিন্তু সন্তোষজনক ফল পাচ্ছেন না।
গত ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর আলমডাঙ্গা উপজেলার জোড়গাছা, ঘোলদাড়ি, জাঁহাপুর, বেলগাছি, অনুপনগর, শালিকা, দীঘলডাঙ্গাসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত বীজতলা দেখা গেছে। তীব্র শীতের প্রচন্ডতা থেকে বীজতলা রক্ষা করতে কোন কোন কৃষক পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিয়েছেন। অনেকে আবার বিচালী (খড়) দিয়ে ঢেকেছেন। তবে তাতেও ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না বীজতলাকে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা যায়, এ বছর আলমডাঙ্গা উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে১০৬৯০ হেক্টর। চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩৩৪২৫ হেক্টর। আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৬৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সোহেল রানা জানান, “অপেক্ষাকৃত বিলম্বে বপণ করা বীজতলাগুলোর চারা তীব্র শীতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এ ক্ষতি খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। প্রচন্ড শীতের পাশাপাশি রোদও হচ্ছে। ফলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে না।”
আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, “ তীব্র শীতে বীজতলার ক্ষতি হলেও চারার সংকট খুব বেশি হবে না। কৃষকরা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বীজতলা তৈরি করেন।”