২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে ৫ বছরে ১২৯টি ইট ভাটায় আবাদযোগ্য জমি কমেছে ৫ হাজার হেক্টর,কমছে মাটির উর্বরতা!

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
জানুয়ারি ১০, ২০২১
42
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 


স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহে কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে ইটের ভাটায়। এতে একদিকে কৃষি জমি কমছে অন্যদিকে কমছে মাটির উর্বরতা। গত ৫ বছরে নানা কারণে জেলায় আবাদযোগ্য জমি কমেছে ৫ হাজার হেক্টর। এরমধ্যে অন্যতম হলো ইটভাটায় মাটি বিক্রি। এভাবে চলতে থাকলে তা সার্বিকভাবে বিরুপ প্রভাব ফেলবে কৃষি পরিবেশের উপর বলছেন কৃষি ও অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা। ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের মাঠে বেশ কিছুদিন ধরেই কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে ইটের ভাটায়। এমন অবস্থায় ভ্রাম্যমান আদালতের উপস্থিতি দেখে পারিয়ে যায় মাটি কাটার সাথে সংশ্লিষ্টরা।

এমনচিত্র শুধু জেলার সব স্থানেই। কিছু অসাধু জমি মালিকের সহযোগীতায় ভাঁটা মালিকরা প্রতিদিন ট্রলিভর্তি মাটি নিয়ে যাচ্ছেন ভাটায়। এতে ওই জমি অসমতল হয়ে পড়ায় পাশ^বর্তি জমিগুলোও ক্ষতির সম্মুখনি হচ্ছে, ব্যহত হচ্ছে চাষাবাদ। আর ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করেও বন্ধ করতে পারছেন না কৃষি জমির মাটি কাটা। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় গত পাঁচ বছর আগে আবাদ যোগ্য জমির পরিমাণ ছিল এক লক্ষ ৫৫ হাজার ২ শ’ ৩৫ হেক্টর আর বর্তমানে তা কমে দাড়িয়েছে এক লক্ষ ৫০ হাজার ২ শ’ ৩৫ হেক্টরে। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরো বেশী হবে স্থানীয় সাধারন মানুষের মত। জেলায় ইট ভাঁটা রয়েছে ১২৯ টি।

এরমধ্যে অনুমোদন কৃত ভাঁটা রয়েছে মাত্র সাতটি। এসব ভাটার জন্য প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৫ হাজার ট্রলি মাটি কাটা হচ্ছে। হরিনাকুন্ডু গ্রামের দবির মন্ডল জানান, ধান কাটার পর থেকেই জমি থেকে মাটি কাটা শুরু হয়েছে। জমি থেকে মাটি কাটার পক্ষে সবাই না কিন্তু বাধ্য হয়ে অনেককে মাটি কাটতে হয়। জমি থেকে মাটি কাটার পর পাশের জমিগুলো উঁচু হয়ে যায়। তখন উঁচু জমিতে ফসল হয় না। তখন বাধ্য হয়ে জমির মাটি কেটে নিচু করতে হয়। তিনি আরো জানান, মাঠে ভাল জমিতে পুকুর করছে। অনেকে জমির মাটি কেটে উঁচু বা নিচু করছে মাটি ব্যবসায়ী মোঃ হাবিল জানান, প্রতিটা এলাকার কৃষি জমি থেকেই এক-দেড় ফিট গর্ত করে মাটি কাটা হয়। পাশ^বর্তি ভাঁটা মালিকদের সাথে চুক্তিভিত্তিক মাটি নিয়ে তাদের দেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটার ম্যানেজার জানান, আমরা সরাসরি মাটি কিনি না। মাটির ব্যবসায়ীরা এসে আমাদের মাটি দিয়ে যায়। তবে আমার জানামতে কৃষিজমি যেগুলো পানি ছেচের অনুপোযোগী সেগুলো থেকে মাটি কাটা হয়।

এ ছাড়া বেশিরভাগ পুকুর কাটে সেসব মাটি আমাদের ভাটায় দেয়। আমরা সরাসরি মাঠের মাটি কিনি না। তিনি আরো জানান জমির মালিক যদি তার জমির মাটি বিক্রি করে দেয় এখানে আমার কিছু বলার নেই। সরকারি লালন শাহ কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহব্বত আলী জানান, কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ার ফলে উর্বরতা যেমন কমছে তেমনি নানা দিক থেকে মাটি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। কয়েক বছরে ভাটার সংখ্যা বেড়েছে ৬০%, কৃষি জমিও কমেছে। এটি ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় শঙ্কার কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। ঝিনাইদহ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ^াস জানান, কৃষি জমি হ্রাস রোধ করতে হবে। সাথে সাথে অবশিষ্ট জমিতে উন্নত প্রযুক্তি ও জাত ব্যবহার করতে হবে। ঝিনাইদহ ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হেদায়েত উল্লাহ জানান, কৃষি জমির মাটি কেটে নেওয়া আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।

কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে এমন একটি অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে মাটি কাটার ভারী জিনিস জব্দ করা হয়। এ ছাড়া হরিনাকুন্ডু উপজেলার মাটি ব্যবসায়ী মোঃ হাবিলকে দুই দফায় জরমিনা করা হয়। তিনি আরো জানান, দিন দিন কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। আবার যদি জমি থেকে এভাবে মাটি তোলা হয় তাহলে কৃষি জমি আরো কমে আসবে। জমি রক্ষায় আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে যোগ করেন।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram