২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় টিএসপি ও ডিএপি সারে সংকট দেখিয়ে কৃষকদের কাছে বেশি দামে সার বিক্রি

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
অক্টোবর ২৮, ২০২০
23
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : টিএসপি ও ডিএপি সারের সংকট তৈরি করে ডিলাররা কৃষকদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন। টিএসপি সার প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে বাজারে ১৪শ টাকা থেকে সাড়ে ১৭শ টাকা পর্যন্ত। ডিএপি সার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১১শ টাকায়। কৃষকদের সারের সংকট দেখিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা তাদের জমিতে আলু, ভুট্রা, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করছেন।

সার সংকটের কারণে কৃষকের চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় সারের কোন সংকট নেই বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়। এখনও যথেষ্ট সারের মজুদ রয়েছে ডিলারদের কাছে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় বিসিআইসি ও বিএডিসির নিবন্ধনকৃত ডিলার রয়েছেন ১১৩ জন। নিবন্ধনকৃত ডিলারদের নির্দিষ্ট সময়ে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি সার বরাদ্দ দেওয়া হয়। অক্টোবর মাসে ইউরিয়া ৩৭৯৫, টিএসপি ১১৬৩, এমওপি ১৬৩১ ও ডিএপি ২৪৪৯ মেট্রিক টন করে ডিলারদের বরাদ্দ দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় ইউরিয়া ১৪০৯, টিএসপি ২১৯, এমওপি ৩৯৫ ও ডিএপি ১১৫৮ মেট্রিক টন সার মজুদ রয়েছে ডিলারদের কাছে। টিএসপি সার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৬৮ মেট্রিক টন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩৫ মেট্রিক টন, দামুড়হুদা উপজেলায় ৭০ মেট্রিক টন ও জীবননগর উপজেলায় ৪৬ মেট্রিক টন মজুদ রয়েছে। আর ডিএপি সার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২৭৭ মেট্রিক টন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৪৮৫ মেট্রিক টন, দামুড়হুদা উপজেলায় ২২৯ মেট্রিক টন ও জীবননগর উপজেলায় ১৬৭ মেট্রিক টন মজুদ রয়েছে ডিলারদের গোডাউনে। মঙ্গলবার সকালে চুয়াডাঙ্গার বেশ কয়েটি স্থানে সার ডিলারের গোডাউন ঘুরে দেখা যায় সব জায়গায় টিএসপি ও ডিপিএ সারের মজুদ রয়েছে গোডাউনে। কৃষকরা ডিলারদের কাছে সার কিনতে গেলে তাদের বলা হচ্ছে সার নেই। অনেক ডিলার বলছেন সার বেশি দামে কিনছি তাই বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে। অন্য জায়গা থেকে এনে দিলে দাম বেশি পড়বে। আবার কৃষকরা গ্রামের সারের দোকান থেকে বেশি দামে কিনে ¯িøপ নিয়ে এসে ডিলারের গোডাউন থেকে সার নিয়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু নির্দিষ্ট দামে কৃষকরা সার কিনতে চাইলে বলা হচ্ছে সারের সংকট রয়েছে পরে আসবা। অনেক কৃষককে গালাগালি ও মারধর করার হুমকি দিচ্ছেন সার ডিলাররা। চুয়াডাঙ্গায় সরকার নির্ধারিত টিএসপি দেশী সারের দাম ১১শ টাকা হলেও কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ১৭৪০ টাকা পর্যন্ত। আবার টিএসপি অন্য কোম্পানির সারের দাম নেওয়া হচ্ছে ১৩শ-১৪শ টাকা পর্যন্ত। আর ডিএপি সারের সরকার নির্ধারিত মূল্য ৮শ টাকা হলেও ১ হাজার টাকা থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারে। সারের সংকট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধির ফলে জেলায় এ মৌসুমে চাষ ব্যাহত হতে পারে। কৃষকরা বর্তমানে মাঠে সবজি, ভূট্রা, আলুসহ বিভিন্ন ফসল লাগাচ্ছেন। সারের অভাবে চাষ বন্ধ থাকলে এ মৌসুমে লক্ষ্য মাত্রা আর্জন না হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। অনেক কৃষক নির্ধারিত সময়ে সার কিনতে না পারার আশঙ্কায় চাষ থেকে বিরত থাকছেন। চুয়াডাঙ্গা ডিঙ্গেদহ বাজারে বিসিআইসির সার ডিলার আনছার আলীর গোডাউনে টিএসপি সার ১১৩ বস্তা ও ডিএপি ৬৬৯ বস্তা মজুদের তালিকায় লেখা থাকলেও কৃষকদের ফেরত দেওয়া হচ্ছে।

আবার দেখা যাচ্ছে তাদের মনোনিত গ্রামের দোকান থেকে ¯িøপ নিয়ে আসলে ঠিকই সার গোডাউন থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা হানুরবাড়াদি গ্রামের কৃষক ঝলক বলেন, টিএসপি সার সকালে ডিঙ্গেদহ থেকে ১৭৪০ টাকায় কিনে আনলাম। জমিতে সার দিতে হবে বলেই এ দামে সার কেনা। চুয়াডাঙ্গা হানুরবাড়াদি গ্রামের কৃষক পলক বলেন, মঙ্গলবার সকালে ডিঙ্গেদহ বাজারে আনছার আলীর কাছে সার কিনতে গেলে বলেন টিএসপি সার নেই পরে আসবি। কিন্তু বেশি দামে গ্রামের অন্যরা সার সেখান থেকে ঠিকল কিনে আনছেন। কিন্তু আনছার আলীর গোডাউনে সব ধরনের সার মজুদ রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা গড়াইটুপি বাজারের সার ডিলার আনোয়ার ট্রেডার্সের মালিক হাজি আনোয়ার বলেন, চায়না ডিএপি সার ১ হাজার টাকায় বিক্রি করছি প্রতি বস্তা। দেশী ডিএপি সার আমার কাছে নেই। চুয়াডাঙ্গা ডিঙ্গেদহ বাজারের সার ডিলার আনছার আলী বলেন, বেশি দামে সার অন্য জায়গা থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সার বেশি দামে বিক্রির বিষয়টি উপর মহলের লোকজন জানেন। সারের সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাহিদা মোতাবেক সার পাচ্ছি না। তাই টিএসপি ও ডিএপি সারের সংকট রয়েছে।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এ্যাসোসিয়েশন চুয়াডাঙ্গা শাখার সভাপতি মীর মহি উদ্দিন বলেন, কিছুটা সমস্য তো আছে। বেশি দামে সার বিক্রি হচ্ছে আমি শুনেছি। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রির জন্য ডিলারদের বলব।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, জেলায় কোন সারের ঘাটতি নেই। ডিলারদের কাছে যথেষ্ট সার মজুদ রয়েছে। এ মাসে সকল ডিলার নির্দিষ্ট সময়ে সার উত্তোলন করেছেন। বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জনাবো। জেলা প্রাশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, বেশি দামে সার বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই। আমি বিষয়টি খোজখবর নিয়ে দেখছি। যে সব ডিলার সারের দাম বেশি নেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সারের মজুদ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram