২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চাকুরীর নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগে কোটচাঁদপুরে মানবন্ধন

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
জুলাই ১৯, ২০২১
22
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 


স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ- ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাবেক এমপি নবী নেওয়াজের বিরুদ্ধে চাকুরী দেয়ার নাম করে অগণিত মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগে কোটচাঁদপুর উপজেলা চত্বরে মানবন্ধন করেছে ৮৪ বছর বয়স্কো বৃদ্ধ অসুস্থ সাবেক এক স্কুল শিক্ষক শুকুর আলী মাষ্টার পরিবার। বিষয়টি নিয়ে টাকা ফেরতের দাবীতে রোববার বেলা ১১টার দিকে ভুক্তভোগী পরিবারের ব্যানারে কোটচাঁদপুর উপজেলা চত্বরে মানবন্ধন করেছে এলাকার বেশ কিছু ভুক্তভোগী পরিবার।

মানববন্ধনে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ২০১৪ সালে নবি নেওয়াজ ঝিনাইদহ-৩ আসনে (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। সে সময় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরীর চাকুরির প্রলোভন দেখান এমপি নবি নেওয়াজ।

এ প্রলোভনে অধিকাংশ ভুক্তভোগী চুক্তি অনুযায়ী নিজের যত সামান্য জমি সেটি বিক্রি বা বন্দক দিয়ে কেউ কেউ এনজিও থেকে লোন নিয়ে চাকুরীর আশায় এমপি নবি নেওয়াজসহ তার কথামত তার স্বজনদের হাতে নগদ টাকা তুলে দেন। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও সে চাকুরী হয়নি বা টাকাও কেউ ফেরত পাননি। বর্তমানে সম্পদ হারিয়ে ওই সকল ভুক্তভোগী গরীব অসহায় পরিবার গুলি করোনা কালিন লক ডাউনে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভুক্তভোগিরা বলেন-দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সাবেক এমপি নবি নেওয়াজ বিষয়টি সমাধান করবেন বলে একের পর এক আমাদেরকে ঘুরিয়ে যাচ্ছেন। আর আমরা পারছিনা। যে কারণে টাকা ফেরতের দাবীতে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে আবেদন করাসহ আমরা পথে নামতে বাধ্য হয়েছি। কোটচাঁদপুর-মহেশপুর এই দুই উপজেলাতে কয়েক বছর বিষয়টি চাউর থাকলেও গত ১০/১২ দিন ধরে ভুক্তভোগীরা নড়েচড়ে বসে। তারা প্রধানমন্ত্রী’র বরাবর অভিযোগ পত্র দেয়া ছাড়াও অভিযোগের ফটো কপি সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেন।

ভুক্তভোগী কোটচাঁদপুর উপজেলার দোড়া ইউনিয়নের ধোপাবিলা গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ৮৪ বছর বয়স্কো শুকুর আলী মাষ্টারের ছেলে আহসানুল হক সাবু বলেন- ২০১৫ সালের দিকে আমাকে নৈশ প্রহরীর চাকুরীর দেয়ার কথা বলে সাবেক এমপি নবি নেওয়াজের আত্মীয় মহেশপুর উপজেলার আলামপুর গ্রামের মান্নানের মাধ্যমে ৬লাখ ২০হাজার টাকা নেন সাবেক এমপি নবী নেওয়াজ। তিনি দাবী করেন টাকা গুলি মান্নানের সাথে যেয়ে ঢাকা ন্যাম ভবনে এমপি হাতে দিই। এমপি সাহেব টাকা গুলি তার স্ত্রী হাতে দিয়ে আলমারীতে তুলে রাখতে বলেন। আমার সে চাকুরী তো হয়নি বরং টাকা চাওয়াতে এমপি নবি নেওয়াজ আত্মীয় মান্নান ও তার বাহিনী দিয়ে টাকা দেয়ার নাম করে ডেকে তাদের দিয়ে আমার ও আমার শ্বশুরকে মারধোর পর্যন্ত করেছে। এমনকি পুলিশ দিয়ে একাধিক বার সে সময় হয়রানীও করেছে কথা গুলি বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন ভূক্তভোগী সাবু।

আরেক ভুক্তভোগী কোটচাঁদপুর উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম সরদার মানব বন্ধনে বলেন-আমার বাপ-মা মরা এতিম ভাইপো রুহুল আমিনকে খুব ছোটবেলা থেকে আমি বড় করেছি। নৈশ প্রহরীর সার্কুলার দেখে এলাকার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভাইপো রুহুল আমিনের চাকুরীর জন্য সে সময়ের এমপি নবি নেওয়াজের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি বলেন-এমপি নবি নেওয়াজ চাকুরীর আশ্বাস দিয়ে দরখস্ত করতে বলেন। এ সময় ওখানে (এমপি নবি নেওয়াজের মহেশপুর গ্রামের বাড়ী) উপস্থিত প্রতিবেশী পাতানো ভাগনা আতিয়ার রহমানের কাছে টাকা লেনদেনের পরামর্শ দেন এমপি নবি নেওয়াজ। পরে তিনি চুক্তি ৭লাখ টাকা হলেও ভাগনের ১বিঘা ও তার ১০কাঠা বিক্রি করে এবং এনজিও থেকে লোন নিয়ে ৫লাখ ৮৬হাজার টাকা যোগাড় করে কোটচাঁদপুর কলেজষ্টান্ডের সিরাজুল ইসলামের বাসায় বসে আতিয়ার রহমানের হাতে তুলে দেন।

এ সময় এলাকার বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সার্কুলারটা স্থগিত হয়ে যায়। পরে টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করে এমপি নবি নেওয়াজ। দিনের পর দিন ঘোরাতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি এমপি থেকে বিদায় নিলে নবি নেওয়াজের নিজ গ্রাম মহেশপুর কাদবিলা গ্রামে এক শালিসী বৈঠকে বাধ্য হয়ে এমপি নবী নেওয়াজের ভাগনে আতিয়ার ৫লাখ ৮৫হাজার টাকার বেসিক ব্যাংকের একটি চেক দেন। চেক নং-০২০৯২০১৯। কিন্তু তারিখ অনুযায়ী চেকটি ব্যাংকে জমা দিলেও একাউন্টে টাকা না থাকায় চেকটি পাশ হয়নি। পরে আবারো শালিসে ডিটের মাধ্যমে ২লাখ টাকা নগদ ফেরত দেন তারা। এরপর থেকে বাকি টাকা নিয়ে টালবাহানা করছেন। বর্তমানে আমার ভাইপো জমি হারিয়ে পরের জমিতে কামলা দিচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন-পরে জানতে পেরেছি একটি পদে একাধিক আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্যদের নিকট থেকে এভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাবেক এমপি নবি নেওয়াজ ও তার স্বজনেরা।

তিনি বলেন, অনেকটা বাধ্য হয়েই শেষ পর্যন্ত সাবেক এমপি নবি নেওয়াজের বিরুদ্ধে প্রধান মন্ত্রীর নিকট অভিযোগ করেছি সেই সাথে মানব বন্ধনে করতে আমরা বাধ্য হয়েছি। এদিকে অভিযুক্ত আতিয়ার বলেন-টাকা সাবেক এমপি নবি নেওয়াজ নেননি। টাকা তিনি নিজেই নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে টাকা ফেরত দিয়েছেন তিনি। তিনি দাবী করেন এমপি সাহেব নিজে যে টাকা গুলি নিয়েছিলেন প্রত্যেকেরই চাকুরী দিয়েছেন। বিষয়টি জানতে চাইলে বর্তমান এমপি অ্যাড. শফিকুল আজম খান চঞ্চল বলেন-এ ধরণের একাধিক অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। তবে তিনি সাবেক এমপি তার বিরুদ্ধে আমি তো ব্যবস্থা নিতে পারিনা। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতারা দেখবেন। তিনি বলেন, যদি সাবেক এমপি এধরণে ঘটনা ঘটিয়েই থাকেন তার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ নেবে না।

কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী শাহাজাহান আলী বলেন-নবি নেওয়াজ এমপি থাকা অবস্থায় চাকুরীর দেবার কথা বলে গণহারে টাকা নেয়াসহ তার অন্যান্য অপকর্মের কথা জেলা মিটিং-এ তুলে ধরে ছিলাম। সেখানে জেলা নেতৃবৃন্দ ছাড়াও অনেক কেন্দীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটার ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ময়জদ্দিন হামিদ তিনি অভিযোগে সত্যতা স্বীকার করে বলেন-গরীব অসহায় পরিবারদের সাথে এমন আচারণ মেনে নেয়া যায় না। এর একটা সূরাহ হওয়া প্রয়োজন। অভিযোগের বিষয়ে সাবেক এমপি নবি নেওয়াজ বলেন-টাকা আমি নেয় নি। আমাকে রাজনৈতিক ভাবে হেয় করার জন্য প্রতিপক্ষ একটি মহল এগুলি করছে।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram