২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোটচাঁদপুরে যুব মহিলা লীগের সভাপতি পিংকি হিজড়াসহ ৬ জনের নামে মামলা রেকর্ড!

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
নভেম্বর ১৮, ২০২০
31
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 


স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ আদালতের নির্দেশে দেশের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) জনপ্রতিনিধি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার আলোচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাদিয়া আক্তার পিংকীকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রেকর্ড করেছে কোটচাঁদপুর থানা। মামলাটি দায়ের করেছেন আরেক তৃতীয় লিঙ্গ স¤প্রদায়ের বর্ষা মীর। আসামিরা সবাই তৃতীয় লিঙ্গ স¤প্রদায়ের মানুষ। প্রায় ৫মাস আগে মারা যাওয়া লাবলী ওরফে আক্তারুল (৩৫) নামের আরেক তৃতীয় লিঙ্গের একজন মারা যাওয়া ঘটনায় হত্যার অভিযোগ তোলেন ঝিনাইদহের সদর থানার চাকলা এলাকার (হিজড়া) বর্ষা মীর। গত ১১ নভেম্বর ঝিনাইদহের বিজ্ঞ জুডিসিয়াল আমলী আদালতে লাবলী ওরফে আক্তারুলকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে এই মর্মে তিনি অভিযোগ করেন।

আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে কোটচাঁদপুর থানাকে মামলাটি নথি ভূক্ত করার নির্দেশ দিলে কোটচাঁদপুর থানা ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় মামলাটি নথি ভূক্ত করেন। কোটচাঁদপুর থানার মামলা নং- ৫, ধারা- ৩৬৪,৩০২,৩৪। এর আগে আদালতে অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে গত ১৩ নভেম্বর একটি রিপোর্ট কালের কণ্ঠে প্রকাশিত হয়। কোটচাঁদপুর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাদিয়া আক্তার পিংকী-ই হচ্ছেন তৃতীয় লিঙ্গ স¤প্রদায়ের মধ্যে দেশের সর্ব প্রথম একজন নির্বাচিত জন প্রতিনিধি। মামলার বাদী বর্ষা মীর অভিযোগ পত্রে বলেন, এলাকার ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে গত ৭জুন কোটচাঁদপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাদিয়া আক্তার পিংকী ও তার ৫জন সহোযাগী হিজড়া লাবলী ওরফে আক্তারুলকে কোটচাঁদপুর উপজেলার পিছনে তার ভাড়া বাসা থেকে করোনা হয়েছে প্রচার করে মুখ বেঁধে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে যায়।

পরবর্তীতে হিজড়া লাবলী ওরফে আক্তারুলকে দুই হাতের রগ কেটে গলায় ফাঁস দিয়ে তারা হত্যার পর চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করলে মৃত লাবলী ওরফে আক্তারুলের গ্রামের বাড়ী চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থানার নাস্তিপুর কবর স্থানে তাকে মাটি চাপা দেয়া হয়। মামলার বাদী বর্ষা মীর আরো অভিযোগ করেন, মৃত লাবলী ওরফে আক্তারুল একজন পূরুষ ছিলেন। তার স্ত্রী ও দুটি সন্তান রয়েছে। ৬ বছর আগে সাদিয়া আক্তার পিংকী তাকে ফুসলিয়ে অপারেশনের মাধ্যমে হিজড়া বানান। সেই থেকে সে কোটচাঁদপুর বাসা ভাড়া নিয়ে হিজড়াদের সাথে চলাফেরা করে জীবন ধারণ করে আসছিলো। প্রায় ১ বছর ধরে এলাকা ভাগাভাগি নিয়ে পিংকীর সাথে লাবনী ওরফে আক্তারুলে সাথে মত বিরোধ দেখা দেয়। যে কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে কোটচাঁদপুর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তৃতীয় লিঙ্গের (হিজরা) সাদিয়া আক্তার পিংকী এ প্রতিবেদককে বলেন- এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঝিনাইদহের সদর থানার চাকলা এলাকার বর্ষা হিজড়া এলাকার বিভিন্ন হিজড়ার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে দাবিয়ে রাখতো। যেহেতু আমি একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হলেও আমি একজন নির্বাচিত জন প্রতিনিধি।

গত উপজেলা নির্বাচনের আগে আমি কথা দিয়ে ছিলাম সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমি তৃতীয় লিঙ্গ স¤প্রদায়দের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করবো। সে লক্ষে হিজড়াদের মধ্যে এ আধিপত্যের দ্ব›দ্ব নিরশনে আমি বেশ কয়েক বার উদ্যোগ নিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সাথেও আমি বলেছি। কিন্তু বর্ষা হিজড়া বসতে চায়নি বা বসেনি। আমি সব সময় নির্যাতিতদের পাশে আছি। যে কারণে বর্ষা হিজড়া মেনে নিতে না পেরে আমাকে দূর্বল করতে সে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। তিনি দাবী করেন হার্ডের সমস্যা জনিত কারণে লাবনী ওরফে আক্তারুলের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু তার হয়েছে।

যার সার্টিফিকেট সে সময় লাশের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিয়ে দেয়। তিনি এই মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, প্রসাশনের উচিত হবে তদন্ত করে মামলা মিথ্যা প্রমানিত হলে তারও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া। পিংকী বলেন আমি যতটুকু জেনেছি তা হলো, লাবনি ওরফে আক্তারুল ওই সময় চরম অসুস্থ হয়ে পড়লে কয়েক জন হিজড়া তাকে মাইক্রোতে করে আক্তারুলের নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। দর্শনা পারকৃষ্ণপুর-মদনপুর ইউনিয়নের মেম্বর আশিক ইকবাল জানান, ওই সময় করোনার ভয়ে লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স গ্রামে ডুকতে দিতে বাঁধা প্রদান করে গ্রামবাসী। পরে ওই এলাকার পুলিশে সহযোগীতায় এবং লাশের সাথে আসা হাসপাতালের দেয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে লাশবাহী গাড়ী গ্রামে ঢোকে। লাশের সাথে আসা সার্টিফিকেটে বলা হয়েছে আক্তারুল হার্ড এ্যাটাকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

পরে তার নিকটাত্মীয়রা আক্তারুলকে গোছল দিয়ে ছিলো এবং তারাই তাকে দাফন করে ছিলো। তাদের কাছ থেকেও হত্যার এমন কোন আলামতের কথা আমরা শুনিনি। তিনি বলেন, তারপরও সে সময় মৃত আক্তারুলের বাড়ি লকডাইন করে দেয়া হয়। আমরা ওই পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করেছি। হঠাৎ করে তার হত্যার মামলার কথা শুনে তিনি অবাক হয়েছেন বলে জানান।


বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর থানার এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ইমরান আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদকে বলেন- সবে মাত্র মামলা রেকর্ড হয়েছে। দুই এক দিনের মধ্যে কবর থেকে লাশ তোলার জন্য আদালতে আবেদন করবো। তার পর প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram