১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালীগঞ্জে পাট পঁচাতে চলছে জলাশয় ভাড়া!

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
সেপ্টেম্বর ২, ২০২১
25
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 


স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ- ফলন হয়েছে বেশ। দামও ভালো। তাই হাসিখুশিতে আছেন কৃষকেরা। বলছেন সোনালী আঁশের সেই সোনালী দিন ফিরে এসেছে। কিন্তু পরে রোপন করা পাটের সুখবর নেই। পঁচানোর জন্য যথেষ্ট জলাশয় না থাকায় নাবি পাটচাষীদের জন্য পাট এখন গলার কাটা। কারও পাট এখনও ক্ষেতে আবার কারও পাট কেটে ফেলে রেখে শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। কৃষকদের ভাষ্য,আগের দিনের মত গ্রামের পতিত জলাশয় নেই বললেই চলে। এগুলো সব ভরাট করে চাষাবাদের উপযোগী হয়ে গেছে। আবার কেউ কেউ বাধ্য হয়ে হাঁটু পানিতে কাঁদার মধ্যে ডুবিয়ে রাখছেন পাট।

তাছাড়াও আগের দিনের মত বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টি ও হয়না। সর্বোপরি গ্রাম এলাকায় খালগুলো সব ভরাট হয়ে পানি নেই। এমন অবস্থা কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় ১১ টি ইউনিয়নের সকল মাঠের। কৃষকেরা বলছেন, নদী ও খালগুলো খনন করতে পারলে সত্যি সত্যিই ফিরে আসবে সোনালী আঁশের সোনালী দিন। কালীগঞ্জ উপজেলা চলতি বছরে এ উপজেলার পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলে ১ হাজার ৭’শ ৫০ হেক্টোর। কিন্তু চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮’শ ১৯ হেক্টোর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশ বেশি চাষ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগই জে আরও ৫২৪ জাতের। যা ফলনও হয়েছে দেখার মত। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ ভাগেরও বেশি কৃষকেরা কেটে ফেলেছেন।

নাবী জাতের পাট অর্থাৎ বাকিগুলো পানির অভাবে কৃষকেরা পঁচাতে পারছেন না। কিন্তু বাজারে পাটের দাম ভালো তারপরও পাটকাঠি বিক্রি করে আসবে আরও বেশ টাকা। চলতি বছরের নাবি পাট নিয়ে কৃষকেরা খানিকটা বেকায়দায় আছেন। কেউ কেউ হাঁটু পানিতে কোন রকমে চাপা দিয়ে রাখছেন পাট। আবার কেউ কেউ জলাশয় ভাড়া নিয়ে পাট পঁচাতে বাধ্য হচ্ছেন। কেননা আগের দিনের মত জলাশয় নেই। তাদের গ্রামের পাশে কোন নদী উন্মুক্ত জলাশয় নেই। গ্রামের পাশ দিয়ে আশপাশের কয়েক গ্রাম ঘেষে একটি খাল বয়ে গেলেও সেখানে মাটি ভরাট হয়ে পানি একেবারে নেই বললেই চলে। অথচ আগের দিনে আমাদের পূর্ব পূরুষেরা অসংখ্য উন্মুক্ত জলাশয় পেতেন। এতে সারাবছর মাছ পেতেনও আবার বর্ষার মৌসুমে সেখানে পাট পঁচাতেন। সে সময়ে বেশি পানিতে পাট পঁচানোর কারণে পাটের রঙ সোনালী আাঁশের মতই হতো। কিন্তু এখন কম ও ময়লা পানিতে পাট পঁচানোর কারণে রঙ কালো হয়ে যায়।

বাজারে এগুলোর দাম কম পাওয়া যায়। এদিকে জলাশয়ের অভাবে কেউ কেউ এখনও পাট কাটেননি। ক্ষেতেই শুকিয়ে যাচ্ছে পাট। পাটচাষী আবদুর রশিদ জানান, জলাশয় না থাকায় তাদের গ্রামের কৃঞ্চ কুমার বিশ্বাসের মাত্র ১ দেড় ফুটের মত জলাশয়ের নিচু ধান চাষের জমিতে বেশ কিছু পাটচাষী পাট পঁচাতে দিয়েছেন। বিনিময়ে জমির মালিককে মূল্যবান পাটকাঠি অর্ধেকটা দিতে হবে। এটা দেয়ার কারণ জমির মালিক ধানচাষ করলেও বেশ টাকার ধান পেতেন। আমাদের কারণে তাকে তো লোকসান করানো যায় না।

পাটচাষী আশিয়ার রহমান জানান, তিনি বলেন ভালো পাট হলে এক বিঘা জমিতে ২০ মন পাট উৎপাদন সম্ভব। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা শিকদার মোহাম্মদ মোহাইমেন আক্তার জানান, এ উপজেলাতে পাট উৎপাদন হয়েছে আগের দিনের মত। ফলন ও দাম সব কিছুতে কৃষক মহা খুশি। এ পর্যন্ত এখানকার প্রায় ৭০ ভাগের বেশি পাট কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। কিন্তু উন্মুক্ত জলাশয় না থাকায় নাবি পাট পঁচানো নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন কৃষক। পাট উৎপাদনে বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের অংশ কালীগঞ্জেও এখন পাট চাষে ঝুঁকেছেন। কিন্তু প্রয়োজন পাট পঁচানোর জন্য ভরাট হয়ে যাওয়া খাল ও নদী খননের ব্যবস্থা করা।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram