২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনা হটস্পট আলমডাঙ্গাসহ চুয়াডাঙ্গা জেলার স্বাস্থ্য সুরক্ষা বলয় ভেঙ্গে পড়বে

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
জুলাই ৯, ২০২১
17
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 


করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তছনছ হয়ে গেছে আলমডাঙ্গাসহ চুয়াডাঙ্গা জেলার স্বাস্থ্যসুরক্ষা বলয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা ভারতের সীমান্তবর্তি জেলা হওয়ায় এবং এ জেলায় ইমিগ্রেশন হওয়ায় করোনার ভারতীয় ডেল্টা টাইপে আক্তান্ত হওয়ার ঝুঁকি ছিল সর্বাধিক। এ সব বিবেচনায় এ জেলাতে আরও আগেভাগেই লকডাউনের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। বিলম্বে সারা দেশের সাথে সাথে চুয়াডাঙ্গা জেলাতে যে লকডাউন চলমান, সেটি আরও কঠোর হলেও এমন নাজেহাল পরিস্থিতির বিলম্ব ঘটানো সহজ হত। দেড় মাসের অধিক সময় ধরে জেলায় করোনার তাÐব শুরু হয়েছে। সচেতন নাগরিকেরা মনে করছেন, সঠিক সময়ে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় এবং লকডাউন কঠোর না হওয়ায় আলমডাঙ্গাসহ চুয়াডাঙ্গা জেলা এখন কুষ্টিয়া জেলার মতই করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে আলমডাঙ্গায় প্রতিদিন ৩/৪ জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুসহ জেলায় প্রতিদিন কমবেশি ১২ থেকে ১৫ জন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যাচ্ছেন।


গত বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি আলমডাঙ্গার থানাপাড়ার এক ইতালি প্রবাসী যুবকের প্রথম করোনা ধরা পড়ে। তারপর থেকে পর থেকে আলমডাঙ্গায় একের পর এক রোগী বাড়তে থাকে। সে সময় থেকে করোনা প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রাজনীতিবিদেরা মাঠে নামেন। জেলা-উপজেলায় গঠন করা হয় করোনা প্রতিরোধ কমিটি। সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে দেওয়া হয় খাদ্য সহায়তা।


করোনা প্রতিরোধে ব্যবস্থা:
চুয়াডাঙ্গাতে করোনা প্রতিরোধে তেমন উল্লেখযোগ্য চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সীমান্তবর্তি এ জেলাটি করোনার হটস্পট হয়ে উঠলেও স্থাপিত হয়নি পিসিআর ল্যাব। সদর হাসপাতাল ছাড়া নেই কোন সুচিকিতসালয়। সদর হাসপাতালে নেই আইসিইউ ব্যবস্থা। এই সদর হাসপাতালে এখনও অক্সিজেনের অভাবে ঝরছে করোনা রোগির প্রাণ।


জেলার প্রত্যেকটি উপজেলার অবস্থা কম বেশি একই রকম উদ্বেগজনক। আলমডাঙ্গা উপজেলায় প্রতিদিন করোনা উপসর্গ নিয়ে ৩/৪ জনের মৃত্যু হচ্ছে। পৌর এলাকার বন্ডবিল গ্রাম, উপজেলার ভাংবাড়িয়া গ্রাম, বাঁশবাড়িয়া, ফরিদপুর, ডামোশ, জামজামি এলাকায় ঘরে ঘরে সর্দিকাশি-জ্বর। পরিবারের প্রায় সকলেই আক্রান্ত হচ্ছেন। তবুও মানুষ করোনা টেস্টে আগ্রহী নন। নিজ বাড়িতেই করোনা রোগির পরীক্ষা চলছে। রোগির অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে নেওয়া হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা অথবা কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে।


আলমডাঙ্গা উপজেলার বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। হারদীতে অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন ভেঙ্গে তার স্থলে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। চলছে বড্ড ঢিমেতালে। মন্থর গতিতে। এই করোনাকালীন যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে পারত রোগিদের আশ্বস্তের স্থল, তা আজ নিরাশার স্থল। এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেকের ৬ জন চিকিৎসক ডেপুটিশনে অন্যত্র দায়িত্ব পালন করছেন। প্রশাসনিক কাজ চলছে কোন রকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।


আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাক্তার হাদী জিয়াউদ্দীন আহমেদ সাঈদ বলেন, গত বুধবার পর্যন্ত এ উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৮৬ জন। এখন যারা করোনা পজিটিভ হচ্ছেন তারা আরও ২ সপ্তা আগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাহলে ২ সপ্তা আগে যদি লকডাউনের ব্যবস্থা করা হলে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হত না। তাছাড়া, বর্তমানে যে লকডাউন চলছে তার চিত্র দেখতে হলে সকালে বাজার করতে যেতে হবে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই নেই। চলমান লকডাউন আরও ১ সপ্তা বৃদ্ধি করা দরকার।


আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড সালমুন আহমেদ ডন দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, লকডাউন কার্যকর করতে প্রশাসনের যেমন কিছুটা নমনীয়তা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তেমনই মানুষও লকডাউন মেনে নিতে প্রচন্ড অনীহা দেখাচ্ছেন। যার ফলে বর্তমানে করোনার হটস্পট এখন আলমডাঙ্গাসহ পুরো চুয়াডাঙ্গা জেলা।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram