১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার সবগুলি প্রতিমা কুমার নদে বিসর্জন

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
অক্টোবর ২৭, ২০২০
30
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

কুমার নদের ভরা বুকে বিজয়া দশমীতে আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার সবগুলি এবং কালিদাসপুর গ্রামের প্রতিমা কুমার নদে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। বরাবরের মতন এ বিসর্জন উপলক্ষে কুমার নদের তীরে ভক্ত ও দর্শনার্থিদের ঢল নামে। সন্ধ্যার পর পর বিসর্জন দেওয়া হয় সব কটি প্রতিমা। ২৬ অক্টোবর মঙ্গলবার দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের পাঁচ দিনব্যাপী সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হল। বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মা দুর্গা তার সন্তান কার্তিক, গণেশ, লক্ষী, সরস্বতীসহ কৈলাশে স্বামীর গৃহে ফিরে গেলেন। তার আগে মহালয়ায় তিনি মর্ত্যে পিতৃগৃহে আগমন করেন।   গত কয়েক দিন মন্ডপগুলো ঢাকঢোল, কাঁসর ঘণ্টা, শাঁখের ধ্বনী ও ধুপের ধোঁয়া, আর ভক্তিমন্ত্রে মুখর হয়ে ওঠে।

সন্ধ্যায় মন্ডপে মন্ডপে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ঢল নামে। শিশু, কিশোর, তরুণ, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এতে অংশ নেন। মহানবমীর এ দিন ষোড়শ উপাচারে দেবীর বন্দনা ও মহাস্নান-যজ্ঞ, আর সন্ধ্যায় আরতি বন্দনায় আনন্দময়ীর অর্চনা করেছেন ভক্তরা। ফুল, ফল, জলসহ নানা উপাচারে দুর্গা দেবীর চরণে অঞ্জলি প্রদান করেছেন।

করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবছর শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজা মÐপ গুলোতে সাউন্ড সিস্টেম ও সীমিত পর্যায়ে আলোকসজ্জা, জনসমাগমও ছিল সীমিত। প্রত্যেক পূজা মন্ডপে প্রবেশের গেটে সাবান, পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা  ও স্যানেটাইজার রাখার রাখা হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতিতে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজা মÐপের সার্বিক নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবছর সকল উৎসব উদযাপন করেছে। বিকেল থেকে শুরু উপচেপড়া ভিড় ছিল গভীর রাত পর্যন্ত। নবমী বিহিত পূজা, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতিসহ ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আলোচনা সভা ও সীমিত আকারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।২৬ অক্টোবর সোমবার সকাল থেকেই মন্ডপে মন্ডপে দেবী বিদায়ের সুর বেজে ওঠে। সকালে দশমীবিহিত পূজার পর করা হয় দর্পণ বিসর্জন। মা দুর্গার শ্রীচরণে অঞ্জলি ও মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলন। দেবী বিদায়ের আগে দুপুর ১২টায় মন্ডপে মন্ডপে ভক্তরা (মা-বোনেরা) সিঁদুর খেলায় অংশ নেন।

এবারে পূজা মন্ডপগুলিতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যথেষ্ঠ তৎপর ছিল। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সূর্যাস্তের পর পরই সব পূজামন্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের সময় বেঁধে দিয়েছিল। বিসর্জনস্থল কুমার তীরেও পর্যাপ্ত পুলিশের উপস্থিতি ছিল। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো; লিটন আলী, আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীর, পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মাসুদুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগৈর সহসভাপতি জেলা পূজা উৎযাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক প্রশান্ত অধিকারী,  উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ইয়াকুব আলী মাস্টার, উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক মাসুদ রানা তুহিন, উপজেলা তথ্য অফিসার সিগ্ধা দাস, পৌর কাউন্সিলর মতিয়ার রহমান ফারুক, জহুরুল ইসলাম স্বপন, আব্দুল গাফফার, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ডাঃ অমল কুমার বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক নয়ন সরকার, পৌর সভাপতি পরিমল কুমার ঘোষ, সাধারন সম্পাদক জয় বিশ্বাস, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষেদের সভাপতি মনিন্দ্রনাথ দত্ত, সাধারন সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাধু খাঁ, পৌর সভাপতি লিপন বিশ্বাস, সাধারন সম্পাদক পলাশ আচার্য, বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী বিজেস কুমার রামেকা।

দুপুর পার হতেই সব পূজাম-প ঘিরে শুরু হয় শুধুই বিষাদের ছায়াপাত। বিদায়ের সুর বেজে উঠে মন্ডপগুলোতে। বিষাদের ছায়া ঘনায় প্রতিটি ভক্তের হৃদয়েও। দেবীকে বিদায় দিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শেষ মুহূর্তের পূজা-অর্চনা সম্পন্ন করেন। সন্ধ্যার আগেই শহরের সকল প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে শোভাযাত্রাসহ কুমার নদের তীরে নিয়ে যাওয়া হয়। শঙ্খ, ঢাক-ঢোল, কাঁসা, জুরিসহ নানা বাদ্যবাজনায় মুখরিত হয়ে ওঠে কুমার নদের তীর। বিসর্জনস্থল সব ধর্মের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সন্ধ্যার অস্তরাগে কুমার নদের নিস্তরঙ্গ জলে প্রতিমা বিসর্জন শেষে বিসর্জনের বেদনা নিয়ে ভক্তসকল ঘরে ফেরেন।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram