২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গায় পুলিশের তাড়া খেয়ে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া সবজি ব্যবসায়ী টোকন আলীর লাশ দীর্ঘ ২৬ ঘন্টা পর উদ্ধার

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২
18
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

হাট‌বোয়া‌লিয়া প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় পুলিশের তাড়া খেয়ে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া সবজি ব্যবসায়ী টোকন আলীর লাশ দীর্ঘ ২৬ ঘন্টা পর উদ্ধার হয়েছে। ডুবুরির দল সকাল থেকে চেষ্টা করে দুপুরের দিকে স্থানীয় মাথাভাঙ্গা নদীর আঠারোখাদা এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। গত বুধবার আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্প পুলিশ তাসের আসরে অভিযান চালালে দু'জন পাশের মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেন। একজন সাঁতরে ওপারে গিয়ে উঠতে পারলেও নিহত টোকন পানির স্রোতে নদীতে তলিয়ে যান। খুলনা থেকে ডুবুরি দল এসে টোকনের লাশ উদ্ধার করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার অলস দুপুরে ভাংবাড়িয়া ফেরিঘাট পাড়ার আব্দুর রহমানের ছেলে আকছেদ আলী, ইয়াদুল ইসলামের ছেলে কবিরুল, সুন্নত আলীর ছেলে নাজিম ও ওসুমদ্দিনের ছেলে সবজি ব্যবসায়ী টোকন গাছের ছায়ায় বসে তাস খেলছিলেন।

এ সময় পার্শবর্তি হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্পের এএসআই জাহিদুল ইসলাম দু'জন পুলিশ নিয়ে তাসের আসরে হানা দেন। পুলিশ আকছেদ ও কবিরুলকে ধরে তাদের কাছ থেকে ২ হাজার ৮শ টাকা নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সুজনের জিম্মায় ছেড়ে দেয়। এদিকে, পুলিশের তাড়া খেয়ে নাজিম ও টোকন পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেন। নাজিম সাঁতরে ওপারে গিয়ে উঠলেও টোকন নদীর স্রোতে তলিয়ে যান। নদীর দীর্ঘ এলকাজুড়ে রাত অবধি অনেক খোঁজাখুঁজি করেও টোকনের আর সন্ধান মেলেনি।

সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গার সহকারি পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান, আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। কিন্ত ডুবুরি দল না থাকায় নিখোঁজ টোকনের হদিস পেতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। এরপর খুলনা থেকে ডুবুরি দলকে তলব করা হয়।

ডুবুরি দল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে মাথাভাঙ্গা নদীতে টোকনের সন্ধান করতে থাকে। অবশেষে গতকাল দুপুরের দিকে মাথাভাঙ্গা নদীর আঠারোখাদা এলাকা থেকে টোকনের লাশ উদ্ধার করা হয়।


নিহত টোকনের বড় ভাই আকালী ও স্থানীয়রা জানান, ইউপি সদস্য সুজন মাঝে-মধ্যেই দারোগা জাহিদুলকে এলাকায় ডেকে এনে হুমকি-ধামকি দিয়ে লোকজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। এদিনও সুজনের মধ্যস্থতায় ২ হাজার ৮শ টাকা নেয় দারোগা জাহিদুল। কিন্ত টোকন নিখোঁজ থাকার খবরে ভয় পেয়ে দারোগা পরে ওই আটাশ শ টাকা ফেরৎ দিয়ে দেন।

টোকন আলীর স্ত্রী মিতা খাতুন (২৮)বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং বলতে থাকেন পুলিশই আমার স্বামীকে খেয়েছে, পুলিশ আমার জানকে স্বামীকে ফিরিয়ে দিক, এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে বারবার মোর্ছা যায়। তিনি আরও বলেন পুলিশ আমার স্বামীকে ঘাটের পানিতে মারি ফেলি এসে বলে তোমার স্বামী কোথায়, আমি বলি সে মাঠে আছে। তখন পুলিশ বলে তোমার স্বামী তাস খেলা করছিল আমরা তাড়া দিয়েছি ওরা পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়েছে বাড়িতে এসেছে কি খোঁজ নিতে আসলাম। তখন আমি বলি না সে বাড়িতে আসেনি। তারপর আমরা খুজাখুজি করতে থাকি। আমার জানকে তাজা পালাম না, আমি এখন কি করবুরে নাবালক দুই ছেলে মেয়ে কে নি কোতায় যাব। তবে এব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে কোন অভিযোগ বা মামলা করবেন না।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান বলেন, জুয়া খেলার আলামত না পাওয়ায় আটক দু'জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। নদীতে ডুবে টোকনের মৃত্যুর বিষয়টি পর্যালোচনা করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক রফিকুজ্জামান, খুলনা ডুবুরি দলের লিডার শফিকুল ইসলাম, ডুবুরি নবীর উদ্দিন, ড্রাইভার কাম হুমায়ূন ও আহম্মদ আলী। কেউ বাদী না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই বিকাল পাঁচটার সময় ভাংবাড়ীয়া কবরে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram