১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গায় পিলারে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন: ব্যবসায়ী আমানুল্লাহ আটক

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
ফেব্রুয়ারি ২, ২০২২
27
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

চুযাডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় শেখ ট্রেডার্সের পণ্য পরিবহনের গাড়ি থেকে একটি নুডুলসের প্যাকেট আর নারকেল তেল চুরি করে নিয়ে পালাচ্ছিলেন সাদ্দাম হোসেন। এসময় কয়েকজন সাদ্দামকে তাড়িয়ে ধরে তুলে দেয় ওই পণ্যের মালিক ব্যবসায়ী আমানুল্লাহ’র হাতে। পরে তাকে বৈদুতিক খুঁটির সাথে বাধা হয় কিশোর গড়নের সাদ্দামকে। স্টিলের পাইপ দিয়ে দিয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করেন ব্যবসায়ী আমানুল্লাহ। দীর্ঘসময় ধরে সাদ্দামের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মম নির্যাতন চালানো হয় । ঘটনাটি ১ ফেব্রæয়ারী মঙ্গলবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা পৌর শহরের হাফিজ মোড়ে ঘটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে সাদ্দামকে উদ্ধার করে থানায় নেয় পুলিশ। সাদ্দাম হোসেন (২২) আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার থানাপাড়ার আকমল হোসেনের ছেলে।


এদিকে, সাদ্দামকে বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালানো একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের হাতে হাতে। এরপর নজরে পড়ে পুলিশের। নির্যাতনের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্যাতনকারী শেখ আমানুল্লাহকে রাতেই আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। রাতেই নির্যাতিত সাদ্দামের স্ত্রী বাদী হয়ে আমানুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন । আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম জানান, নির্যাতনের শিকার যুবক সাদ্দাম হোসেনও একজন অপরাধী। তার বিরুদ্ধে দুইটি মামলা চলমান রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ।


স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার হাফিজ মোড়ে শেখ ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পণ্যের পরিবেশক ব্যবসা করেন শেখ আমানুল্লাহ। বিভিন্ন দোকানের অর্ডারের পণ্য ডেলিভারির জন্য মঙ্গলবার দুপুরে গাড়িতে মালামাল তুলছিলো শেখ ট্রেডার্সের কর্মচারীরা। এসময় ওই গাড়ি থেকে নুডুলস ও নারকেল তেল নিয়ে দৌড় দেয় সাদ্দাম হোসেন। বিষয়টি দেখে স্থানীয় কয়েকজনও তার পিছু নেয়। ধাওয়া করে সাদ্দামকে ধরে শেখ ট্রেডার্সের মালিক আমানুল্লাহ’র নিকট হস্তান্তর করে স্থানীয়রা।


পরে আমানুল্লাহ নিজেই দোকানের সামনের খুঁটির সাথে সাদ্দামের দুই হাত বেধে রাখেন। এরপর স্টিলের পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। এ ঘটনা দেখে সেখানে জড়ো হতে থাকে লোকজন। সাদ্দামকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন আমানুল্লাহ। ব্যাপক জেরার সাথে সাথে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। মধ্যযুগীয় কায়দায় চালানো নির্যাতনের ঘটনাটি অনেকেই দেখেছে।


তবে, প্রকাশ্যে এ নির্যাতনের চিত্র দেখা দর্শকদের মধ্যে কয়েকজন অবশ্য বলেছেন, খুঁটির সাথে বেধে পাইপ দিয়ে মারপিট দেখে ভেবেছিলাম বড় ধরনের কোনো অপরাধী। কারণ আরও অনেকজনই দাঁড়িয়ে ঘটনাটি দেখছিলো। এজন্যই নির্যাতনকারী ওই ব্যক্তিকে থামানোর জন্য কোনো কিছু বলিনি। পরে জানতে পারি সে সামান্য নুডুলস নিয়ে যাচ্ছিলো। এই অপরাধের কারণে ওইধরণের নির্মম নির্যাতন কখনোই মেনে নেয়া যায় না। নির্যাতনকারী ওই ব্যবসায়ীর শাস্তি হওয়া উচিত বলেও মনে করেন কয়েকজন।


এদিকে, সাদ্দামকে বেধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মম নির্যাতনের একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বর্বরোচিত এ ঘটনার ভিডিও দেখে হতবাক সুশিল সমাজের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্থানীয়রা বলেছেন, অপরাধী যত বড়ই হোক না কেন, তার জন্য আইন আছে। আর মারধর করারও একটা সীমা আছে, প্রকাশ্যে দোকানের খুঁটিতে বেধে নির্মম নির্যাতন করে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমানুল্লাহ’র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছেন তারা।


নির্যাতনকারী শেখ আমানুল্লাহ বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমার প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে আমি অতিষ্ট। কিছুতেই চোর ধরতে পারছিলাম না। নারিকেল তেল ও নুডুলসের প্যাকেট চুরি করে পালানোর সময় সাদ্দামকে হাতেহাতে ধরে স্থানীয়রা আমার নিকট নিয়ে আসে। তবে দোকানের খুঁটিতে বেধে মারধর করা আমার অন্যায় হয়েছে।


আলমডাঙ্গা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খন্দকার মুজিবুল ইসলাম বলেন, সাদ্দামের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আছে। এর আগেও শেখ ট্রেডার্স থেকে বিভিন্ন মালামাল চুরি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার চুরির সময় স্থানীয়রা হাতেনাতে ধরে। পরে আমানুল্লাহ দোকানের খুঁটিতে বেধে সামান্য মারধর করেছে বলে শুনেছি। তবে, এভাবে মারধর করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি অন্যায় হয়েছে তার। মারধর না করে পুলিশে দেয়া উচিত ছিলো।


চুয়াডাঙ্গা মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার বলেন, দোকানের খুঁটিতে বেধে নির্যাতনের ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে এটাইতো বড় অপরাধ। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। অপরাধীকে অবশ্যই আইনের কাছে সোর্পদ করতে হবে। নির্যাতনের শিকার যুবক বা তার পরিবার আমার সাথে যোগাযোগ করলে মানবতা ফাউন্ডেশন থেকে তাকে বিন্যামূল্যে তার সব রকমের সহযোগিতা করা হবে।


আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে সাদ্দামকে উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়। তবে নির্যানতের বিষয়টি তখন জানা ছিলো না। পরে নির্যাতনের ভিডিও দেখেছি। এভাবে কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না। রাতেই নির্যাতনকারী শেখ আমানুল্লাহকে আটক করা হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনায় সাদ্দামের স্ত্রী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। চুরির ঘটনায়ও সাদ্দামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। তিনি আরও বলেন, সাদ্দামের বিরুদ্ধে আলমডাঙ্গা থানায় একটি চুরি ও একটি ছিনতাই মামলা চলমান। একবার পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলো। ২ ফেব্রæয়ারী নির্যাতন মামলায় আমানুল্লাহকে এবং চুরি মামলায় সাদ্দামকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram