২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গায় নারী উদ্যোক্তাদের সম্মামনা স্মারক প্রদান অনুষ্ঠান

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
ডিসেম্বর ২১, ২০২০
43
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

 “আমি রাজবাড়ির মেয়ে মোহনা আক্তার ভালবেসে বিয়ে করি আলমডাঙ্গার ঘোলদাড়ির যুবকের সাথে।  আর দশটা প্রেমের বিয়ের মত প্রথমদিকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাদের বিয়ে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেননি। বাড়ি থেকে স্বামীকে নব বধুসহ বের করে দেওয়া হল। বেকার স্বামী মোহনাকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় ভাড়াবাড়িতে বসবাস শুরু করেন। কপর্দকশুণ্য আমাদের দিন যায় নিদারুন কষ্টে। একেকটি দিন আমাদের নিকট একেকটি বছর মনে হয়। এক পর্যায়ে স্বামীর একটি ছোট্ট চাকরী হয় মেহেপুরে। তারা মেহেপুরে চলে যান। বাসা নেন মেহেরপুরের দেশবিখ্যাত মিষ্টি সাবিত্রী ঘরের পাশাপাশি। স্বামীর ছোট চাকরিতে সংসারে অস্বচ্ছলতার কাল ছায়া কিছুতেই দূর হচ্ছিল না।

কিন্ত সবকিছু নিঃশেষ করতে পৃথিবীজুড়ে হানা দেয় মহামারি করোনা। করোনার আতংকের মধ্যেই আমার স্বামী স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। আমাদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে অসীম আধাঁর। কোলের একমাত্র সন্তান ও অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে মোহনা যখন মধ্য সাগরের অথৈ জলে হাবুডুবু খাচ্ছেন ঠিক তখনই উই নামের এক ই-কমার্স অনলাইন পেইজের দেখা পান তিনি। সাহস করে তিনি সেখানে সাবিত্রি মিস্টির একটা পোস্ট দেন। অসম্ভব সাড়া পান তিনি।  ত্রিশ হাজার টাকার মিষ্টি ডেলিভারী দিতে হবে। ঘরে শেষ সম্বল তিন হাজার টাকাও ছিল না। পরদিন মিষ্টি ডেলিভারী দিয়ে দেন তিনি। আমার ব্যবসা শুরু হয়ে যায়। প্রচুর অর্ডার আসতে এরপর মনোযোগ দিই নিজের প্রডাকক্ট বিক্রি করতে।  নিজেই হয়ে উঠি মিষ্টির সুদক্ষ কারিগর। নিজের ঘরে বানাতে থাকি মজাদার মিষ্টি 'মিক্সড ড্রাই ফ্রুট'লাড্ডু। এই মিষ্টি কাস্টমারের অত্যধিক পছন্দ।“

উপরোক্ত গল্প শুনিয়েছেন নারী উদ্যোক্তা মোহনা আক্তার। গত ২১ ডিসেম্বর আলমডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত নারী উদ্যোক্তা সম্মামনা প্রদান অনুষ্ঠানে। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে “আলমডাঙ্গার কথা”নামের ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ। এ অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ থেকে এসে একত্রিত হয়েছিলেন প্রায় ২০ জন নারী উদ্যোক্তা।

মোহনা আক্তারের মত উচ্চ শিক্ষিত  দীলরুবা খাতুন বেকারত্বের গঞ্জনা দূর করার গল্প শুনিয়েছেন, সাইদা গুলশানারা বীথি শুনিয়েছেন কীভাবে নিজের উপার্জনের অর্থে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন ও হাল ধরেছেন অসহায় পরিবারের, ফারহানা রুমা শুনিয়েছেন কীভাবে তার সী ফুডস আর বেবি আইটেম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন দেশে বিক্রি হচ্ছে সে কাহিনি, আনিসা আক্তার শুনিয়েছেন কীভাবে নকশীকাঁথাসহ হ্যান্ডমেইড সামগ্রী বিক্রি করে নিজের পড়াশোনা ও পরিবারের ব্যায় নির্বাহ করেন সে গল্প, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া আয়েশা আক্তার শুনিয়েছেন কীভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন সে গল্প, হেলেনা আক্তার কামনা শুনিয়েছেন তার কৃষিপণ্য ও অর্গানিক ফুড় এখন শুধু দেশে বিক্রি হয় তাই না বিক্রি হচ্ছে বিশ্বের ৩০টি দেশে।

নারী উদ্যোক্তা লামিয়া তাসনিম আলমডাঙ্গা কলেজপাড়ার মেয়ে এবং চুয়াডাঙ্গা শহরের গৃহবধু। তিনি বলেন, মাত্র ৫ হাজার টাকা নিয়ে কাজ শুরু করি। ২০১৯ সাল থেকে “সম্পূর্ণা “ নামে একটি পেজ খুলে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রায় ১ বছর যাবত কাজ করে আসছি। লামীয়া প্রথমে মেয়েদের থ্রি পিস নিয়ে কাজ শুরু করি। বর্তমানে বেশ কয়েকটি পণ্য নিয়ে বাজার জাত করছি।

অনুষ্ঠানে ঘুরে দাঁড়াবার গল্প শুনিয়েছেন সালমা বেগম, তাসমীমা জাহান, পাপিয়া সুলতানা, মেহেরাব সামসাদ মিথুয়াসহ উপস্থিত সকল নারী উদ্যোক্তা।

“আলমডাঙ্গার কথা”গ্রুপের অ্যাডমিন সাংবাদিক ফিরোজ ইফতেখারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার  লিটন আলী। এ সময় তিনি বলেন, প্রত্যেক উদ্যোক্তা আত্মনির্ভরশীল মানুষ। আপনারা এ যুগের বেগম রোকেয়া। আপনার একেকজন প্রদীপ্ত সূর্যশিখা, জ্বলন্ত নক্ষত্রের মত। নিজেস্ব সৃষ্টিশীলতায়, আপন আলোয় উদ্ভাসিত করবেন আমাদের দেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট। এ সময় তিনি নারী উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগীতা করার আশ্বাস দেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমুন আহমেদ ডন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মারজাহান নীতু, উপজেলা হহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাকসুরা জান্নাত, বণিক সমিতির সাধারন সম্পাদক কামাল হোসেন, সাংবাদিক রহমান মুকুল ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব উজ্জ্বল খন্দকার।

অনুষ্ঠান শেষে সকল নারী উদ্যোক্তাকে সন্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram