১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আনন্দধাম নার্সি হোমে চিকিৎসা দেওয়ার মত নেই কোন অভিজ্ঞ ডাক্তার ও নার্স

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১
30
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 


আলমডাঙ্গার আনন্দধাম নার্সি হোম কর্তৃপক্ষের অপচিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিকের সব তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। ক্লিনিককে চিকিৎসা দেওয়ার মত কোন নেই অভিজ্ঞ ডাক্তার ও নার্স। প্রাইভেট মেডিকেল থেকে পাশ করে আসার ক্লিনিক মালিকের ছেলে ডাক্তার শাওন মাঝে-মধ্যে রোগী দেখেন। বাকি সব দেখভাল করে সাইফুল নামের ওয়ার্ড বয়। এক রহস্যময় কারনে এভাবেই ক্লিনিকটি চলছে বছরের পর বছর। স্থানীয়দের প্রশ্ন দেখার কি কেউ নেই?


জানাযায়, ক্লিনিককে গ্রামের পল্লি চিকিৎসকরা কমিশনের বিনিময়ে নামকরা ডাক্তারের নাম করে গ্রাম থেকে রোগীদের নিয়ে ভর্তি করে। গ্রামের সাধারণ মানুষ নামকরা ডাক্তার চেনেন না। অপারেশন থিয়েটারে মাস্ক পরে ঢোকেন ক্লিনিক মালিকের ছেলে ডাক্তার শাওন। তার সাথে যোগ দেয় হাতুড়ে সহকারী এনামুল। পাশে দাড়িয়ে নার্সের ভুমিকা পালন করে ওয়ার্ড বয় সাইফুল । কোন রোগীর স্বজনরা ডাক্তার শাওনকে দিয়ে অপারেশন করবেন না বলে জানালে সেক্ষেত্রে বাইরে থেকে এমবিবিএস ডাক্তার নিয়ে আসা হয়। ডাক্তার অপারেশন করে চলে গেলে বিপদে পড়ে যায় রোগীরা। কারন রোগীদের অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মত কোন ডাক্তার আর থাকে না ওই ক্লিনিকে। এ ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে গেলে চতুর ক্লিনিক মালিক শরিফুল ইসলাম তৎক্ষনাৎ ক্লিনিকের বিল আদায় করে রোগীকে রেফার করে দেন।


এমন ঘটনায় ৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক নবজাতকের মৃত্যু হলে ক্লিনিকের থলের বেড়াল বের হয়ে আসতে শুরু করে। উপজেলার ভোদুয়া গ্রামের শাহাজান শাহ‘র মেয়ে সুমি খাতুনের (২০) প্রসব বেদনা শুরু হলে গত ৬ সেপ্টেম্বর তাকে আলমডাঙ্গা আনন্দধাম নার্সি হোমে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিক মালিকের পক্ষ থেকে সুমির স্বজনদের বলা হয়, সিজার করবেন কুষ্টিয়ার জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডাক্তার আব্দুস সালাম। ওই দিনই সন্ধ্যা ৬টায় সিজারের মাধ্যমে সুমি খাতুন পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। ক্লিনিক মালিক শরিফুল ইসলামের ছেলে প্রাইভেট মেডিকেল থেকে পাস করে আসা ডাক্তার শাওন ও তার সহকারী এনামুল মিলে সুমি খাতুনের সিজার করেন । কুষ্টিয়া জেলারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডাঃ আব্দুস সালামের কথা বলা হলে তিনি জানান শুধুমাত্র এনেসথেসিয়া দিয়েছি।


পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, সিজারিয়ানের পর শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লেও পরবর্তীতে তার চিকিৎসায় কোন উদ্যোগ নেয়নি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। পরিবারের স্বজনরা অভিযোগ তুলে ব্জানান, পর দিন ৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে নিজ উদ্যোগে আমরা জুনিয়র কনসালটেন্ট(শিশু) ডাঃ হাবিবুর রহমানের কাছে নিয়ে যায়। তিনি শিশুটি দেখের পর একটি ব্যবস্থাপত্র করে দেন। কিন্তু ক্লিনিক মালিকের ছেলে শাওন ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ না দিয়ে তা পাল্টিয়ে দেন। এতেই শিশুটি নড়াচড়া বন্ধ করে দেয়। শুধু তাই নয় পরিবারের লোকজন ডাঃ শাওনের সাথে কথা বলতে গেলে খারাপ ব্যবহারও করেন বলে দাবি করা হয়। একপর্যায়ে মৃত নবজাতকে আটকে আদায় করে নেন ক্লিনিকের যাবতীয় বিল।


স্থানীয়রা জানান, আশপাশের সবাই জানে ক্লিনিক চালায় সাইফুল নামের ওয়ার্ড বয়। শহরের কোন রোগী শরিফুলের ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে যান না। বিভিন্ন গ্রাম থেকে পল্লি চিকিৎসকদের নিয়ে আসা রোগীদের দিয়ে চলে ক্লিনিক । ডাক্তার শাওন দাড়িয়ে থেকে সার্জারি করান এনামুলকে দিয়ে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা এ জাতীয় ক্লিনিক বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তারা।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram