২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অপহৃত শিশু ফারহান‌কে উদ্ধার কর‌তে যেভাবে শ্বাসরুদ্ধকর ৮ ঘন্টার অভিযান পরিচালিত হয়

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
এপ্রিল ২, ২০২১
19
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

রহমান মুকুল/ শরিফুল ইসলাম রোকনঃ বিকেল ৫টার দিকে এ অপহরণের ঘটনা ঘটলেও প্রথমে নিজেদের মত খোঁজাখুঁজি করা হয়। কোথাও সন্ধান না পেলে অবশেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনাটি ডায়েরিভূক্ত করেন। তারপর শুরু হয় শ্বাসরুদ্ধকর ৮ ঘন্টার অভিযান। অভিযানে অংশ নেন আলমডাঙ্গা থানার ৮/১০ জন চৌকস অফিসার। ছিলেন সুলতান মাহমুদ নামের একজন আইটি বিশেষজ্ঞ। নেতৃত্বে ছিলেন অ‌তি‌রিক্ত পু‌লিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম ও আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীর।
প্রথমে সিসিটিভি-র ভিডিও ফুটেজ চেক করা। ফাতেমা ক্লিনিক, চারতলা মোড় ও রথতলার সিসিটিভি চেক করা হয়। পরে রথতলার সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজে অপহরণকারি দুজনকে একটি অ্যাপাচি মোটরসাইকেলে যাওয়ার দৃশ্য চিহ্ণিত করেন। এরপর শুরু হয় যে নাম্বার ব্যবহার করে অপহরণকারিরা মুক্তিপণ দাবি করেছিল সে নাম্বারটি ট্র্যাকিং করা। কিন্তু নাম্বারটি অপহরণকারিরা বন্ধ করে দেয়। ফলে ওই নাম্বারের সাথে যাদের সম্প্রতি কথাবার্তা হয়েছে তাদের মোবাইলফোন ট্র্যাকিং করা হয়। চিহ্নিত করা হয় অপহরণের সাথে জড়িতদের।

শুরু হয় গ্রেফতারপর্বঃ
শুরু হয় গ্রেফতার পর্ব। প্রথমে গ্রেফতার করা হয় আনন্দধাম-হাউসপুরের ক্যানেলে বসবাসকারি শোভন ও আকাশকে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পরে গ্রেফতার করা হয় আসাননগরের খোরশেদ আলীকে। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে খোরশেদ জানিয়ে দেয় অপহৃত শিশুর অবস্থান। পরে পুলিশ হাউসপুর এলাকার আট কপাটের নিকটবর্তি জিকে ক্যানেলপাড়ের সেলিমের বাড়ি থেকে অজ্ঞান অবস্থান শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ সময় সেলিমের স্ত্রী রাশেদা খাতুনকে পুলিশ আটক করে। আটক করা হয় অপহরণের মাস্টার মাইন্ড কাজী সুমনকে।

ধূর্ত কাজী সুমনঃ কাজী সুমন অভিযান চলাকালীন সবসময় অপহৃত শিশুর বাবা কাজী সজীবের সাথে ছিলেন। সজীব যেহেতু পুলিশের সাথে সাথে ছিলেন, কাজী সুমনও পুলিশের নিকটেই ঘুরঘুর করছিল। কেউ ধারণা করতে পারে নাই যে এই সুমনই বড় ভিলেন।

অপহরণকারীদের চাতুর্যঃ
অপহরণকারীরা শিশুটিকে এক স্থানে ও নিজেরা অন্যস্থানে ছিলেন। অথচ যোগাযোগের জন্য মোবাইলফোন রেখেছিলেন কুষ্টিয়া জেলার ইবি থানার গোস্বামী দুর্গাপুর। যাতে পুলিশকে বিভ্রান্ত করা সহজ হয়।

৮ ঘন্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান জীবিত ও সুস্থ শিশু উদ্ধারের চ্যালেঞ্জঃ
অ‌তি‌রিক্ত পু‌লিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অপহৃত শিশুদের ম্যানেজ করা বেশ কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে তারা ভয় পেতে শেখেনি। জোরে চিৎকার করে কাঁদে। ফলে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে অপহরকচক্র সাধারণত শিশুদের মেরে ফেলে। অথবা ঘুমের ঔষধ ওভার ডোজ প্রয়োগের ফলে শিশুর ঘুম আর ভাঙ্গে না। এ অভিযানকালে এ বিষয়টি অভিযানে অংশগ্রহণকারি কর্মকর্তাদের মনে রেখেই অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছে। দ্রæত অভিযানে নামতে হয়েছে। অভিযান সাফল্যের জন্য জোর প্রচেষ্টা সবসময় অব্যাহতভাবে রাখতে হয়েছে।

দুটি রুটি অথচ ক্ষুধার্ত মুখ অনেকঃ
অভিযান চালাতে গিয়ে খাওয়া হয়নি কারো। রাত ১১ টার দিকে আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীর বিভিন্ন হোটেলে লোক পাঠিয়ে মাত্র দুটি রুটির ব্যবস্থা করতে পেরেছেন অ‌তি‌রিক্ত পু‌লিশ সুপার সদর সার্কেলের জন্য। রুটি টেবিলে দেখে সকলেরই মনে পড়ে যায় যে তাদের কারও রাতে খাবার পেটে পড়েনি। সকলেই শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান নিয়ে মেতে আছেন। খেতে ভুলে গেছিলেন।

মুখের উপর নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেছেনঃ
আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীর জানান, রাতে শহরের বিভিন্ন সিসিটিভির ফুটেজসহ তথ্য সংগ্রহের সময় অনেকে নানা বিরূপ মন্তব্য করেছেন। এমনকি পুলিশের পক্ষে সম্ভব না অপহরণকারিদের গ্রেফতার করা ও শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করা। পুলিশ সিরিয়াস কাজে দক্ষ না। এমন কী গালি গালাজও হজম করতে হয়েছে। মুখের উপর নানা নেতিবাচক মন্তব্য শুনেও না শোনার ভান করে হজম করে নিঃশব্দে কাজ করে গেছি। দিন শেষে যখন সাফল্য ১৬ আনা তুলে এনেছি - তখন সেই পাবলিকরাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন।

নিজের সন্তানের নামও ফারহানঃ
অ‌তি‌রিক্ত পু‌লিশ সুপার সদর সার্কেল জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কাকতালীয় হলেও সত্য যে, অপহৃত শিশুর নামের সাথে আমার নিজের ছেলের নাম মিলে গেছে। আমার ছেলের নামও ফারহান। আপনজন হারানোর যন্ত্রণা নিজ হৃদয় দিয়ে অনুভব করেই নিষ্ঠার সাথে অপারেশন পরিচালনা করেছি। অপহৃত শিশু ফারহানের বাবার যন্ত্রণা বুকে ধারণ করেছি।

এসআই সুলতানের কথাঃ এস আই সুলতান মাহমুদ একজন দক্ষ আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বিশেষ করে জীবননগরের ব্যাঙ্কে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ মামলার আসামিদের চিহ্নিত করে আটকের সাফল্য থেকে আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন এস আই সুলতান মাহমুদ। এই অভিযানেও এসআই সুলতান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই অভিযান সাফল্যমন্ডিত হওয়ায় এসআই সুলতান মাহমুদ, ঠান্ডা মাথার এসআই আমিনুল ইসলামসহ পুরো অভিযান টিম প্রশংসায় ভাসছেন। সাধারণ মানুষ প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন এ এসপি জাহাঙ্গীর আলম ও আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীরের প্রতি।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram