অপচিকিৎসার কারণে লাখ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ গুণতে রাজি তবুও ডাক্তার নার্স নিয়োগে অনীহা
মাত্র ২/১টি ক্লিনিক বাদে আলমডাঙ্গার অধিকাংশ ক্লিনিকে এমবিবিএস ডাক্তার নেই। এমনকি আলমডাঙ্গার সবচে অভিজাত ক্লিনিক দাবি করা ফাতেমা ক্লিনিকেও নেই কোন ডাক্তার। ডাক্তারবিহীন আলমডাঙ্গার অধিকাংশ ক্লিনিকগুলি বছরের পর বছর কীভাবে রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছে? সচেতনমহলে এ প্রশ্ন ক্রমেই উচ্চকিত হচ্ছে।
জানা যায়, আলমডাঙ্গা পৌর এলাকায় বিভিন্ন নামে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে ১৪টির মত ক্লিনিক। তার মধ্যে হাতে গোনা ২/১টি বাদে একটি ক্লিনিকেও নেই কোন এমবিবিএস ডাক্তার। প্রকৃত ডাক্তারবিহীন এ সকল ক্লিনিকগুলি বছরের পর বছর দোর্দন্ড প্রতাপে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ, সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিশ্চুপ। প্রতিটি ক্লিনিকে অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত এক হালি থেকে এক ডজন করে মেয়ে রাখা হলেও অধিকাংশ ক্লিনিকে একজনও ডিল্পোমা নার্স নেই। ২/৩ মাস অন্তর সিভিল সার্জন বা জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ক্লিনিকগুলি পরিদর্শন করতে আসেন। সে পরিদর্শনের সংবাদও অগ্রিম পৌঁছে দেওয়া হয় ক্লিনিকগুলিতে। ফলে নির্দিষ্ট দিনে বিভিন্নভাবে কিছু ডাক্তারকে ম্যানেজ করে ঘন্টাখানিকের জন্য ক্লিনিকে বসিয়ে রেখে পরিদর্শনের বৈতরণী পার হয় ক্লিনিক মালিকরা। অবশ্য এ পরিদর্শন নিয়েও ওপেন সিক্রেট নানা নেতিবাচক কথা শহরে ছড়িয়েছে।
শহরের সবচে অভিজাত ক্লিনিক দাবি করা ফাতেমা ক্লিনিকও নেই কোন ডাক্তার। রুবেল হোসেন, আলামিন ও ফাতেমা ক্লিনিক মালিক হারদী স্বাস্থ কমপ্লেক্সের রেডিওগ্রাফার মঞ্জুর আলী তিনজন চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করেন। ফলে ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে প্রায় অপচিকিৎসার অভিযোগ উঠে। গত ৩ দিনের ব্যবধানে দুই রোগির অপচিকিতসার ক্ষতিপূরণ বাবদ মোটা অংকের টাকা গুনতে হয়েছে। আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার নওদা বন্ডবিল গ্রামের নূর ইসলামের স্ত্রী প্রসূতি রেশমাকে ৪ দিন ক্লিনিকে ভর্তি করে রাখলেও ফাতেমা ক্লিনিক তার সিজার করেনি। অসহ্য যন্ত্রনায় ফাতেমা ক্লিনিক থেকে প্রসূতি পালিয়ে গিয়ে অন্য একটি ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করিয়ে জানতে পারেন যে গর্ভের সন্তান মারা গেছে। পরে সিজারের মাধ্যমে গর্ভ থেকে মরা পঁচা শিশু ভূমিষ্ঠ করা হয়। সিজারের পর প্রসূতির শারীরিক অবস্থা ভয়াবহ হয়ে উঠে। হতদরিদ্র পরিবারের এমন বিপদ দেখে গ্রামবাসি গত ৪ মার্চ সন্ধ্যায় ফাতেমা ক্লিনিকে চড়াও হয়। পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। তবে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রসূতিকে ২০ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয় ক্লিনিক মালিক।
ফাতেমা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে একই রকম অপচিকিতসার অভিযোগ উঠেছে এরশাদপুরের চাল ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলামের মেয়ে বৃত্তির চিকিৎসার ক্ষেত্রে। তিনিও সিজার অপারেশনের জন্য ফাতেমা ক্লিনিকে এসেছিলেন। ২ মার্চ মোটা অংকের টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে এ ঝামেলা থেকে পরিত্রাণ পেয়েছেন ফাতেমা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। শুধু কী ক্ষতিগ্রস্ত রোগিকেই ক্ষতিপূরণ দিলেই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যায়? আরও অনেককেই সন্তোষ্ট রাখতে হয়।
এত ঝক্কিঝামেলা আর অর্থদন্ড গুণতে হয় শুধুমাত্র ক্লিনিকে এমবিবিএস ডাক্তার নেই বলে। এত সব খাতে মোটা অংকের টাকা ব্যয় করতে রাজি আলমডাঙ্গার ক্লিনিক মালিকরা, তবুও একজন সার্বক্ষণিক ডাক্তার ও নার্স রাখতে রাজি না।
আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হাদী জিয়াউদ্দীন আহমেদ সাঈদ জানান, ফাতেমা ক্লিনিকের মত বড় ক্লিনিকে অন্তত একজন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া উচিত।
আলমডাঙ্গার ক্লিনিকগুলিকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালনার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সচেতন মানুষকেও ভূমিকা রাখতে হবে। কাকে দিয়ে অপারেশন করাচ্ছেন, প্রকৃত চিকিৎসকের নিকট থেকেই চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন কিনা এ ব্যাপারে সকলের সচেতন থাকতে হবে। ক্লিনিকগুলিতে ভূয়া ডাক্তার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ব নিরসনে সাংবাদিকদেরও ভূমিকা রাখা দরকার।
আলমডাঙ্গার ক্লিনিকগুলির এমন দুরাবস্থা, মাঝে মধ্যেই আয়া ও ওয়ার্ড বয় ও ডিএমএফ দিয়ে সিজার অপারেশনের সময় সদ্যজাত শিশুর মৃত্যু, অপচিকিৎসা বা ভুল চিকিতসায় নিত্যনৈমিত্তিক মৃত্যুর ঘটনায় আলমডাঙ্গার সচেতন মহল ক্রমেই ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছেন। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেও তারা বেশ প্রতিবাদমুখর।