২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুদখোরের ভয়ংকর অত্যাচার এক হাজার টাকায় মাসে সুদ তিন’শ টাকা!

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
নভেম্বর ৯, ২০২১
25
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 


স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ- এক হাজার টাকায় মাসে সুদ তিন’শ টাকা। জরুরী প্রয়েজনে কেউ দশ হাজার টাকা নিলে সপ্তায় গুনতে হয় চার হাজার টাকা। শুনতে আবাক লাগলেও ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার মন্ডলতোলা গ্রামে শফি উদ্দীন নামে এক সুদখোর এমন ব্যবসা করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। তার অত্যাচারে হতদরিদ্র মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে এখন গ্রাম ছাড়ছে। অনেকে টাকা দিতে না পেরে হয়েছেন মামলার আসামী। গ্রাম জুড়ে এক বিভিষিকাময় পরিবশে বিরাজ করছে। টাকা না দিলেই নির্যাতনের পাশাপাশি মিথ্যা মামলার আসামী হচ্ছে। তাও আবার মামলা করা হচ্ছে ভিন্ন জেলায়।

জীবন বাঁচার তাগিদে সুদের টাকা নিয়ে মামলার হাজিরা দিতে দিতে ফতুর হয়ে যাচ্ছে মন্ডলতোলা গ্রামের কয়েকটি পরিবার। নিরুপায় হয়ে তারা সোমবার মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ঝিনাইদহ শাখা ও পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সুদখোর শফিউদ্দীন হরিণাকুন্ডু উপজেলার মন্ডল তোলা গ্রামের ওয়াজ উদ্দীনের ছেলে।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, মন্ডল তোলা গ্রামের পাপড় বিক্রেতা রেজাউল ব্যবসার জন্য শফির কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেন। তিন মাস পর তার কাছ থেকে জোর পুর্বক আদায় করেন ৪৩ হাজার টাকা। সুদের টাকা দিতে রেজাউল বিআরবি এনজিও থেকে ৫২ হাজার টাকা কিস্তি তোলেন। তারপরও শোধ হয়নি সুদখোর শফির টাকা। রেজাউল সরদারের বাড়িতে ঢুকে জোর পুর্বক ১৫ হাজার টাকার বিচুলি নিয়ে যান।১৫ হাজার টাকার বিপরীতে শফি আদায় করেন ৫৮ হাজার টাকা। মন্ডল তোলা গ্রামের আফাজ উদ্দীনের ছেলে টিটোন ওরফে বান্ঠা মাত্র ৬ হাজার টাকা নিয়ে ভিটেবাড়ি বিক্রি করে পরিশোধ করেন এক লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

আরো দুই লাখ টাকার জন্য চাপ দিতে থাকলে টিটোন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে। একই গ্রামের আব্দুল জয়নুদ্দীনের ছেলে আব্দুল আজিজ চার হাজার সুদে টাকা নিয়ে আর পরিশোধ করতে পারেননি। ফলে তিনিও গ্রাম ছাড়া হয়েছেন। এদিকে সুদের টাকা নিয়ে আসল পরিশোধ করেও অনেকে মিথ্যা মামলায় ঝুলছেন। তিনি ঝিনাইদহ ছাড়াও তার আত্মীয় বাড়ি মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন আদালতে মিথ্যা ও হয়রানী মুলক মামলা দিয়ে নাজেহাল করছেন। মন্ডল তোলা গ্রামের আব্দুর রশিদ, জহির উদ্দীন, রেজাউল সরদার, নিজাম উদ্দীন, নাজির উদ্দীন, ইসলাম, সুমি বেগম, তাসলিমা খাতুন, মামুন হোসেন ও এরশাদ আলীসহ বহু মানুষ সুদখোর শফির মিত্যা মামলায় জড়িয়ে পথে বসতে চলেছেন। এদের মধ্যে সুমি বেগম ও তাসলিমা খাতুন জানান, ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে সেই মাদারীপুরে মামলার হাজিরা দিতে তাদের খুবই কষ্ট হয়।

সেখানে যাতায়াত করতেই এ পর্যন্ত তাদের ৫০ হাজার টাকার গাড়ি ভাড়া লেগেছে। তারা এই সুদখোরের অত্যাচার থেকে নিস্কৃতি চান। বিষয়টি নিয়ে এলাকার ইউপি সদস্য আব্দুল কুদ্দুস খবরের সত্যতা স্বীকার করে জানান, সুদখোর শফি খুবই খারাপ প্রকৃতির মানুষ। তার অত্যাচারে বিশেষ করে মন্ডল তোলা ও মাঠ আন্দুলিয়া গ্রামের নি¤œবিত্ত পরিবার সুদে টাকা নিয়ে পথে বসেছে।

মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ঝিনাইদহ শাখার সভাপতি আমিনুর রহমান টুকু জানান, এ বিষয়ে মন্ডল তোলা গ্রামের ৮জন নারী পুরুষ লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তারা নিজেদের দুঃখ দুর্দশা, অবর্ননীয় হয়রানী ও আর্থিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেন। আমরা সরেজমিন তদন্ত করে নির্যাতিতদের আইনী সহায়তা দেবার কথা ভাবছি। সুদ ব্যবসায়ী শফিউদ্দীন ওরফে কল শফি মুঠোফোনে জানান, তিনি টাকা দিয়ে ব্যবসা করেন। সেটা সুদ কিনা জানি না। তবে গ্রামের মানুষকে উপকার করেন। টাকা আদায়ের জন্য এসব করতে তিনি বাধ্য হয়েছেন বলে তিনি দাবী করেন।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram