জীবনবাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া, মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া, সামান্যের জন্য বেঁচে যাওয়া, সহযোদ্ধাদের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করার মত হৃদয়বিদারক মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ও খন্ড খন্ড বিজয় অর্জনে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শিক্ষার্থীদের শোনালেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মইন উদ্দীন। তিনি চুয়্যাডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর গ্রামের সন্তান। মুজিব বাহিনির হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাঁর অসম বীরত্বের জন্য এলাকায় তিনি অগ্নিসেনা হিসেবে পরিচিত।
২৫ মার্চ সকাল থেকে দুপুর অবধি তিনি আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজ, আলমডাঙ্গা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আলমডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের কীর্তিগাথা শোনান। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা মইন উদ্দীন জানান, “দেশের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসার টানে পরিবার-পরিজন ও নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলাম। তখন উঠতি বয়স। ১৭ বছরের কিশোর। ১০ ম শ্রেণিতে পড়তাম। বাবা মার নিষেধ উপেক্ষা করেই পালিয়ে ভারতের দেরাদুনে প্রশিক্ষণ নিতে যায়। প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিই।” তিনি পাক বাহিনির সাথে একাধিক সম্মুখ যুদ্ধের বর্ণনা দেন। এ সকল যুদ্ধে জ্যীবন সঙ্কযতাপন্ন হওয়ার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন।
আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গাসহ বৃহত্তর কুষ্টিয়ার বিভিন্ন যুদ্ধে তাঁব বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার বর্ণনা দেন। বর্ণনা দেন পাকিস্তানি বাহিনির হাতে নিহত সহযোদ্ধা আশুর লাশের সাথে করা অবর্ণনীয় নির্যাতনের হৃদয়বিদারক কাহিনি। বর্ণনা দেন দেশের সাথে, দেশের মানুষের সাথে রাজাকারদের জলদগম্ভীর শঠতার! বঙ্গবন্ধুকে চাক্ষুষ দেখার অবিস্মরণীয় মুহুর্তেরও বর্ণনা দেন শিক্ষার্থীদের নিকট। পরিশেষে শোনালেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর বেশ কয়েক মাস আগেই আলমডাঙ্গা থানা চত্বরে প্রবেশ করে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে তা পুড়িয়ে দেওয়ার অনিরুদ্ধ সাহসী কাহিনি। এ ঘটনায় এ ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুর শাস্তির সমূহ আশঙ্কা থাকলেও অল্প বয়সের কারণে প্রাণে বেঁচে যান। ৬ মাসের কারাদÐ ভোগ করতে হয়েছিল। ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত শ্রমিকদের সমর্থনে বের হওয়া মিছিল থেকে তিনি এ অসম সাহসী ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এ সময় তিনি এক সাগর রক্ত আর ত্রিশ লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে নতুন প্রজন্মকে যোগ্য হয়ে উঠতে আহ্বান জানান।
এ সময় আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কৃষিবিদ গোলাম ছরোয়ার, আলমডাঙ্গা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান, আলমডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।