ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশের উপস্থিতির কারণে আলমডাঙ্গার বড়বোয়ালিয়া পশুহাটের আধিপত্য বিস্তার করতে যাওয়া দুটি প্রভাবশালী পক্ষ বড় ধরণের বিবাদে জড়িয়ে পড়তে পারেনি। চাচা-ভাতিজার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট এ উত্তেজনায় শেষ পর্যন্ত পুলিশ-প্রশাসন পানি ঢেলে দিয়েছে।
জানা যায়, আলমডাঙ্গার বড়বোয়ালিয়া পশুহাট ডাকের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত চৈত্র মাসে। তারপর থেকে আজোবধি খাস আদায় পদদ্ধতিতে রাজস্ব আদায় করে আসছে স্থানীয় তহশিলদার। ওই রাজস্ব আদায়কে কেন্দ্র করে ভাংবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান বড়বোয়ালিয়া গ্রামের সন্তান কাউসার আহমেদ বাবলু ও তার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বি ও চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি সোহাগ পরষ্পর আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হুয়েছে।
এলাকাবাসিসূত্রে জানা গেছে, কাউসার আহমেদ বাবলু চেয়ারম্যান ও সোহাগ উভয়েই সংশ্লিষ্ট পশুহাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য। গত সপ্তাহের হাটে সোহাগের লোকজনকে আধিপত্য বিস্তার করতে দেখা যায়। এ ঘটনার পরে গতকালের হাটের আগের রাতে বাবলু চেয়ারম্যানের লোকজন সিদ্ধান্ত নেয় হাটের আধিপত্য তাদের হাতের মুঠোয় নেওয়ার। এ ঘটনা জানতে পেরে সোহাগ পক্ষও ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। পরদিন অর্থাৎ শনিবার হাটের দিন উভয়পক্ষ নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিতে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখে।
তাদের পরষ্পর এ যুদ্ধংদেহী সঙ্কল্পের কথা পুলিশ প্রশাসন জেনে যায়। রক্তক্ষয়ি বিবাদ এড়াতে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি চৌকস টিম প্রেরণ করে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে এস আই তারিফ, এস আই মাসুম বিল্লাহসহ পুলিশের একটি টিম সার্বক্ষণিক উপস্থিত ছিলেন। ফলে বড় ধরণের বিবাদ এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
জেলা পরিষদের সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন প্রয়াত আসাবুল হক ঠান্ডু। তিনি ছিলেন বাবলু চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই। এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন প্রয়াত ঠান্ডু। তার মৃত্যুর পর এলাকাবাসির দাবির প্রেক্ষিতে ছেলে নাহিদ হাসান সোহাগ আগামি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিজেকে প্রার্থি হিসেবে ঘোষণা দেন। সক্রীয় হয়ে উঠেন রাজনীতিতে। এতে বর্তমান চেয়াম্যান বাবলুর সাথে স্বাভাবিকভাবেই তার বিরোধ সৃষ্টি হয়। সময়ের সাথে সাথে চাচা-ভাতিজার সে বিরোধ আরও বেশী ঘণীভূত হয়েছে।
পশুহাটের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনা সম্পর্কে নাহিদ হাসান সোহাগ বলেন, সাপ্তাহিক হাটের খাজনা বর্তমানে সরকারিভাবে তোলা হচ্ছে। ওই উত্তোলিত রাজস্বের একটা অংশ নিতে চেয়ারম্যানপক্ষ হাটে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছিল। চেয়ারম্যানের এই অপতৎপরতাকে বাঁধা দিতে আমরাও প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।
অন্যদিকে, ইউপি চেয়ারম্যান কাউসার আহমেদ বাবলু বলেন, একটি অপচক্র হাটের দখল নিতে চায়। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীর বলেন, বড়বোয়ালিয়া পশুহাটের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বি পক্ষের উত্তেজনা ছড়ানোর সংবাদ পেয়ে হাটবোয়ালিয়া ফাঁড়ি পুলিশসহ আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে প্রেরণ করি। সেখানে পুলিশ দিনভর উপস্থিত থেকে উত্তেজনা প্রশমিত করে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ুন কবীর বলেন, ইজারা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বড়বোয়ালিয়া পশুহাটের ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ওই হাটের রাজস্ব খাস আদায় পদ্ধতিতে সরকারিভাবে করা হচ্ছে। এ হাট নিয়ে স্থানীয় দুটি পক্ষের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র উত্তেজনার সৃষ্টি হলে আমার নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম গতকাল দিনভর হাটে উপস্থিত থাকে।