২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালীগঞ্জে অর্ধলঙ্গ অসুস্থ অজ্ঞাত মানষিক প্রতিবন্ধি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
অক্টোবর ২, ২০২০
28
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 


স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ ২২/২৩ বছরের অর্ধলঙ্গ এক মানষিক প্রতিবন্ধি অসুস্থ পাগলীকে নিয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে স্থানীয়রা। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগী দেখেই বললেন মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা। এখন তার পর্যাপ্ত খাওয়া দাওয়া আর বিশ্রাম দরকার। দেয়া হলো প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা। প্রতিবন্ধির গর্ভের সন্তানের কথা চিন্তা করে আমার অভাবের সংসার হলেও নিজের বাড়িতে এনে রেখেছি।

শত অভাবের মধ্যেও সে এখন আমার পরিবারের আরেক সদস্যের মত। বললেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ময়ধরপুর গ্রামের মৃত সালামত আলীর ছেলে আমজাদ আলী। রোববার বিকেলে সরেজমিনে আমজাদ আলীর বাড়িতে গেলে দেখা যায়, মাটির উপর টিনের ছাউনির একটি ঘরের বারান্দায় স্থির হয়ে বসা রয়েছে এই প্রতিবন্ধি। পাশেই রয়েছে খাবারের একটি থালা।

মানুষ সামনে গেলেই শুধু মুখের দিকে ফ্যালফেলিয়ে চেয়ে থাকছে। আর মুখে হালকা শব্দ করে কী যেন বলছে। যা বোঝা যাচ্ছে না। আমজাদ আলী জানান, আমি একজন গরীব মানুষ। মাঠে কোন চাষযোগ্য জমি নেই। সারা বছর পরের ক্ষেতে কামলার কাজ করে সংসার চালাই। এক মেয়ে আর এক ছেলের মধ্যে মেয়ে লাবনীর বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলে সালমান শাহ রাজমিস্ত্রির কাজ করে। কিন্তু সে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রায় ৬ মাস ধরে শয্যাশায়ী। ফলে এখন শুধু একার রোজগারে সংসার চালাতে হচ্ছে। অভাব তো সারাবছরের জন্য রয়েইছে।

তারপরও নিজেরা যেভাবে থাকি খাই সেটা না হয় পাগলির সাথে ভাগাভাগি করে খাবো। তিনি বলেন, এমনটা যদি আমার মেয়ের হতো তাহলে তো আমাকেই দেখতে হতো। পথে পড়ে থাকা অসুস্থ পাগলীকে অনেকে দেখেছে যাদের সামর্থও আছে। কিন্তু কেউ যখন তাকে নিয়ে ভাবেনি তখন আমি তার গর্ভের সন্তানের কথা ভেবে রাস্তায় ছেড়ে দিতে পারিনি। শনিবার তার আলট্রা সনোগ্রাফী করা হয়েছে রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক বলেছেন মেয়েটি ৮ মাস গর্ভবতী। চিকিসকের পরামর্শ অনুযায়ী পাগলীর ব্যবস্থাপত্র দেয়া হচ্ছে। আমজাদ হোসেনের স্ত্রী ছাকিরন নেছা জানান, মেয়েদের গর্ভপাতের সময়টা অত্যন্ত কষ্টের। এমন অবস্থায় মেয়েটি পথে পথে ঘুরে বেড়াবে ভাবতেও খারাপ লাগছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পাগলীর থাকার জন্য নিজেদের মত করে ঘর নির্মান করা হচ্ছে। নিজেদেরকে বেশ ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। তারপরও একজন মা হিসেবে একজন মেয়ের জন্য যা করা দরকার শত অভাবের মধ্যদিয়েও সামর্থ অনুযায়ী তা করছেন। প্রতিবেশি পল্লী চিকিৎসক অশ্বিনী বিশ্বাস জানান, তাদের গ্রামের আমজাদ নিতান্তই একজন গরীব মানুষ। তারপরও সমাজের একজন মানুষ হিসেবে একজন অসহায় মানষিক প্রতিবন্ধিকে আপন করে নিয়েছেন।

তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর তিনি প্রতিদিনই আমজাদের বাড়িতে গিয়ে ওই পাগলীর খবর নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, পরিচয়হীন পথে ঘাটে ঘোরা ওই মানষিক প্রতিবন্ধি হয়তোবা কোন পশুবৃত্তির মানুষ দ্বারা এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে তার গর্ভের সন্তান তো কোন অপরাধ করেনি। কোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ূব হোসেন জানান, বাজারে ওই পাগলী বেশ কিছুদিন ঘোরাফেরা করছে।

কিন্তু সে অসুস্থ হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে থাকার পর ওই গ্রামের আমজাদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন তাকে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। এখন নিজের পরিবারের সদস্যের মত তারা সেবা শশ্রুষা করছেন। এটা শুনেও ভালো লাগছে। তিনি বলেন, এক শ্রেণীর মানুষরুপী অমানুষদের পাশবিক নির্যাতনে এমনটি ঘটতে পারে বলে তার ধারনা। এখন পাগলীকে ছেড়ে দিলে সে হয়তো ঘুরে বেড়াতে পারবে কিন্তু পথে ঘাটে সন্তান প্রসব করলে ওই সন্তানকে কে দেখবে।

আবার নবজাতকের জন্ম যদি পথে ঘাটে হয়। সভ্য সমাজের কোন মানুষ যদি সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে না আসে। সেটাও দুঃখজনক। পাগলীর যে কোন প্রয়োজনে তিনি আমজাদকে সাহায্য করবেন। সব মিলিয়ে আমজাদ ও তার পরিবারের সদস্যরা যেভাবে মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন সে জন্য ওই পরিবারকে ধন্যবাদ দিতে হয়।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram