আলমডাঙ্গায় আওয়ামী রাজনীতিতে ইতিবাচ নেতৃত্বের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন কিছু তরুণ। নেহাৎ অল্প শিক্ষিত, অশিক্ষিত, অসৎ রাজনীতিকের ভীড়ে কতিপয় শিক্ষিত তরুণ নিজেদেরকে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করছেন। অনেকে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত হয়ে উঠেছেন। ভবিষ্যত নেতৃত্বের পাদপ্রদীপের নিকটবর্তী এ কতিপয় সম্ভাবনাময় তরুণকে নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
অ্যাড. সালমুন আহমেদ ডন : সালমুন আহমেদ ডন ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আলমডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন তিনি। অ্যাড. হিসেবে এনরোলমেন্ট হয়েছেন। অবশ্য আইন পেশার চে রাজনীতি তাকে বেশি আকৃষ্ট করেছে। বয়সে তরুণ এ রাজনীতিকের সংযত আচরণে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় ফুটে উঠে।
আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার গোবিন্দপুর গ্রামের সন্তান তিনি। বাবা প্রয়াত নজীর উদ্দীন আহমেদ ছিলেন আলমডাঙ্গা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জনপ্রিয় ক্রীড়া শিক্ষক। সৎ ও নীতিবান শিক্ষকের সন্তান হিসেবে সালমুন আহমেদ ডনের কিছু সুবিধা হয়েছে। তবে শিক্ষক পিতার কথা স্মরণ করেই তাকে রাজনীতিতে হটকারিতা বিসর্জন দিতে হয়েছে। হতে হয়েছে সংযোমী, ধৈর্য্যশীল ও ভদ্র। ফলে নিজের দলের বাইরেও তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। আগামি দিনের প্রতিশ্রুতিশীল নেতা হিসেবে নিজেকে দাঁড় করানো এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।
জিনারুল ইসলাম বিশাস: স্নাতকোত্তর শেষের আগেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি জিনারুল ইসলাম বিশ্বাসের। কলেজ ছাত্রলীগ শেষে জেলা ছাত্রলীগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আরও পরে আওয়ামী লীগ। জিনারুল ইসলাম বিশ্বাস আলমডাঙ্গা উপজেলার নগরবোয়ালিয়ার ছেলে। বর্তমানে তিনি মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির জনপ্রিয় সভাপতি।
পাশাপাশি নিজেকে এলাকায় জনপ্রিয় বিদ্যুৎসাহী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি হাটবোয়ালিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের একটানা ৩ বারের নির্বাচিত সভাপতি। উপজেলায় একমাত্র তিনিই অভিভাবকদের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি নির্বাচিত। তাছাড়া, রেঁনেসা কিন্ডারগার্টেন, মসজিদসহ বহু সামাজিক সংগঠনের উন্নয়নে তিনি উদারহস্ত। মানবিক, ইতিবাচক চিন্তাচেতনা আর গতিশীল নেতৃত্বের কারণে তরুণ এই রাজনীতিককে নিয়ে মানুষের উচ্চাশার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী দিনে তাকে ঘিরে উন্নয়নের রাজনীতির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন এলাকাবাসী।
গোলাম সরোয়ার শামীম: গোলাম সরোয়ার শামিম ফাস্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটির আইনে স্নাতক। বাড়ি উপজেলার বেলগাছি ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামে। ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সাধারণ পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি ইউনিয়নের রাজনীতিতে নিজেকে অসাধারণ করে তুলেছেন। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। মাত্র ৬ ভোটের ব্যবধানে তিনি পরাজিত হন।
জয়ী হয়েছেন তিন বারের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও আওয়ামী লীগ মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থি আমিরুল ইসলাম মন্টু। অবশ্য এ নির্বাচনের সুঠুতা ও নিরোপেক্ষতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। সে নির্বাচনে পরাজিত হলেও শামিমের জনপ্রিয়তায় এতটুকু চিড় ধরেনি। জুনিয়রদের মাঝে তার জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়া। উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এই তরুণ ভবিষ্যতে জনপ্রিয় কান্ডারী হয়ে উঠবে। এমন মন্তব্য প্রায় কর্ণগোচর হয়।
নাজমুল হোসাইন: অত্যন্ত বিনয়ী ও ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত নাজমুল হোসাইনের বাড়ি উপজেলার ডাউকি গ্রামে। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে গণিতের স্নাতকোত্তর ক্লাসের ছাত্র। তিনি রাজনীতির পাদপ্রদীপের নীচে আসেন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থি হিসেবে। নির্বাচনে অল্প সময়ে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও দলীয় প্রার্থির নিকট অবধারিতভাবেই হারতে হয়েছে। তবে নির্বাচনোত্তর তার জনপ্রিয়তা আরও উর্দ্ধমুখী হয়েছে। তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ন আহ্বায়ক।
সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নসহ বর্তমান সমাজের বিদ্যমান ব্যাধি দূর করতে হলে প্রয়োজন শিক্ষিত ও প্রগতিশীল তরুণদের নেতৃত্ব। বাংলাদেশকে নিয়ে যত নেতিবাচক আলোচনা আছে তা থামিয়ে দেওয়া তরুণ নেতৃত্বের পক্ষেই সম্ভব। এর জন্য তরুণদের মধ্যে সহনশীলতা, অহিংসা এবং ভিন্ন মতামত গ্রহণের সামর্থ্য তৈরি করতে হবে। ভিন্ন মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
গণতান্ত্রিক মানসিকতা লালন করতে হবে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মূল্যবোধের চর্চা করতে হবে তরুণদের। উন্নত জীবনমান ও শান্তির অমিয় ঠিকানা হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হলে তরুণদের মাঝে সদ নেতৃত্বের গুণাবলি সৃষ্টি করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশির বয়স ২৫ বছরের নিচে। আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে তরুণদের মধ্যে নেতৃত্ব গুণ গড়ে তুলতে হবে। গণতন্ত্র, উদার ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়তে তরুণদের নিজেদের সামর্থ্যের ওপর জোর দিতে হবে। এটা তরুণদের লালিত স্বপ্ন হতে হবে। দিন শেষে কিন্তু নিজেকেই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। তাই তরুণদের স্বপ্ন পূরণে নিজেদের সর্বোচ্চটাই দিতে হবে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ডা. অমল কুমার বিশ্বাস বলেন, নেতৃত্ব চর্চা করতে তরুণদের সদিচ্ছা ও যোগ্যতা থাকতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই শিক্ষিত, অসাম্প্রদায়িক ও কাজে কর্মে ইতিবাচক হতে হবে। আর এখন যারা নেতৃত্বে আছেন, তাদের উচিত শিক্ষিত তরুণদের রাজনীতিতে সুযোগ করে দেওয়া।